ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা সিটিতে ভয়াবহ বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। চলমান দুই বছরের যুদ্ধে এটিই সবচেয়ে তীব্র হামলা হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, গাজা সিটির বাসিন্দাদের দক্ষিণে চলে যেতে বাধ্য করতে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। দখলদার দেশটির হামলায় নতুন করে আরও ৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বহু মানুষ।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবি ভাষার মুখপাত্র আভিখাই আদরায় শুক্রবার এক বিবৃতিতে গাজার মানুষদের উদ্দেশে বলেন, সেনারা এবার ‘অভূতপূর্ব শক্তি’ ব্যবহার করবে। তিনি বলেন, ‘এই সুযোগ নিন এবং শত শত হাজার মানুষের সঙ্গে যোগ দিন’, যারা এখন উপকূলীয় আল-রাশিদ সড়ক ধরে দক্ষিণে চলে যাচ্ছেন। গাজা ছেড়ে যাওয়ার জন্য এটিই একমাত্র খোলা রাস্তা।
আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজযুম শুক্রবার নুসেইরাত শরণার্থী শিবির থেকে জানান, গাজা সিটির মানুষদের পশ্চিম দিকে উপকূলীয় সড়কের দিকে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন হামলার কারণে তারা কোথাও বিশ্রাম নিতে পারছে না।
তিনি বলেন, “এই অভিযানে পুরো ব্লক ধ্বংস করা হচ্ছে। এখনও তাল আল-হাওয়া এলাকায় অনেক পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা আছে।”
যদিও শুরুতে অনেকে গাজা সিটি ছাড়তে রাজি ছিলেন না, ক্রমেই আরও বেশি মানুষ দক্ষিণে যাচ্ছেন। কিন্তু গাড়ি ভাড়া করে আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়ার খরচ অনেকের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবু শত শত মানুষ হেঁটে দক্ষিণের আল-মাওয়াসি অঞ্চলের পথে রওনা হয়েছেন।
আল-মাওয়াসি এলাকাটি আগেও ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে, যদিও এটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করা আছে।
পঞ্চাশ বছর বয়সী নিভিন আহমেদ বলেন, তিনি বৃহস্পতিবার সাতজন পরিবার সদস্যকে নিয়ে গাজা সিটি থেকে মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরে পালিয়েছেন। “আমরা ১৫ কিলোমিটারের বেশি হেঁটেছি, ক্লান্তিতে হামাগুড়ি দিতে হয়েছে। আমার ছোট ছেলে ক্লান্তিতে কেঁদেছে। আমরা পালা করে একটি ছোট ঠেলাগাড়িতে কিছু মালপত্র টেনেছি।”
অর্ধেক মানুষ গাজা ছেড়েছে
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আগস্টের শেষ দিক থেকে প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ গাজা সিটি ছেড়েছেন। গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, দক্ষিণে পালিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজা সিটিতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস করতেন। অর্থাৎ অর্ধেক মানুষই এখন শহর ছেড়েছেন। তবে ফিলিস্তিনি সেন্ট্রাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত গাজার উত্তরাঞ্চলে এখনও প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার মানুষ রয়ে গেছেন।
চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার ভোর থেকে গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে ২৬ জন গাজা সিটিতে।
তাল আল-হাওয়ায় এক বাড়িতে বিমান হামলায় তিন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দক্ষিণ গাজায় খাদ্যসামগ্রী নিতে যাওয়া দুই ব্যক্তিও রয়েছেন।
এ ছাড়া মধ্য গাজার আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নয় বছরের এক শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান অবরোধের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে এ পর্যন্ত ৪৪১ জন মারা গেছেন।
গাজায় গত ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে কোনো জ্বালানি প্রবেশ করেনি। ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের প্রধান আমজাদ শাওয়া জানিয়েছেন, গাজায় বিদ্যমান জ্বালানির মজুত আর ৭২ ঘণ্টা চলবে। এরপর হাসপাতালগুলো সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়বে। তিনি এটিকে ‘সব দিক থেকে ভয়াবহ পরিস্থিতি’ বলে উল্লেখ করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।