খুলনা নগরীর পানির সংকট সমাধানে ওয়াসা আবারও মধুমতী নদীর পানি আনার উদ্যোগ নিয়েছে। পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেজ-২ নামের এ নতুন উদ্যোগে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। তবে বিশেষজ্ঞরা শুরুতেই কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, মধুমতী নদীর পানি শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ত হয়ে যায়। ফলে বিপুল অর্থ ব্যয় করেও মানুষ ওই পানি ব্যবহার করতে পারবে না।
প্রকল্প অনুযায়ী, নতুন ধাপে রূপসার সামন্তসেনায় অবস্থিত পরিশোধন কেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়িয়ে প্রতিদিন ১৩ কোটি লিটার পানি সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের সংকট মোকাবিলায় প্রায় ১১৫ কোটি লিটার পানি রিজার্ভারে মজুত রাখা হবে। পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ৭৫টি পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভ থেকে প্রতিদিন ৫-১০ কোটি লিটার পানি তোলা হবে।
কিন্তু পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিকল্পনা আত্মঘাতী। কারণ, ভূগর্ভের পানি তোলা বাড়ালে দীর্ঘমেয়াদে সংকট আরও তীব্র হবে। অন্যদিকে, শুষ্ক মৌসুমে মধুমতীর পানি দেড় থেকে চার মাস পর্যন্ত অতিরিক্ত লবণাক্ত থাকে। এতে প্রকল্প কার্যত ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি আছে।
এর আগেও ২০১৮ সালে প্রায় ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একই ধরনের প্রকল্প নিয়েছিল খুলনা ওয়াসা। সেটি বাস্তবায়ন শেষ হয় ২০২০ সালে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কমেনি। বরং তখন মানুষকে টাকা দিয়ে ওয়াসার কাছ থেকে লবণপানি কিনতে হয়েছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে নিজ বাড়িতে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়েছেন।
খুলনা অঞ্চলে বর্তমানে পানির চাহিদা প্রায় ২৪ কোটি লিটার। এর মধ্যে ওয়াসা সরবরাহ করতে পারে গড়ে ৫-৬ কোটি লিটার। বাকি পানি মেটানো হয় ব্যক্তিগত পাম্পের মাধ্যমে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে লবণাক্ততার প্রবণতা বাড়বে। এজন্য টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা জরুরি। পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, “বারবার একই ভুল করলে প্রকল্প ব্যর্থ হবেই। ওয়াসাকে এখনই বিকল্প পথ ভাবতে হবে।”
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।