প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৫ , ৭:৫৭ অপরাহ্ণ আপডেট: এপ্রিল ৩, ২০২৫ , ৮:০৭ অপরাহ্ণ
চিকিৎসক না আসায় রোগী দেখছেন কার্ডিওগ্রাফার মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি : রূপান্তর প্রতিদিন
ঈদের পর মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর ভিড় ভেড়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর লাইন দেখা গেলেও চিকিৎসকদের কক্ষগুলো ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্ম দিবসে চিকিৎসকেরা অনুপস্থিত থাকায় এনসিডি কর্নারে একজন কার্ডিওগ্রাফারকে রোগী দেখতে দেখা গেছে। এসময় হাসপাতালে পাওয়া যায়নি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসারকেও। এদিকে চিকিৎসক না পেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থেকে রোগীদের বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, এনসিডি কর্নারের সামনে টিকিট হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন রোগী। ভিতরে দরজা বন্ধ করে রোগী দেখছেন কার্ডিওগ্রাফার মোস্তাফিজুর রহমান।
জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান নিজেকে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, সকাল ৯টার সময় এসেছি। এখন পর্যন্ত ৬০-৭০টা রোগী দেখেছি। বাইরে আরও রোগী আছে।
এনসিডি কর্নারে মূলত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়। কার্ডিওগ্রাফারের কাজ হচ্ছে মূলত রোগীর ইসিজি করা। মনিরামপুর হাসপাতালে দীর্ঘদিন কার্ডিওগ্রাফারের পদ খালি থাকায় কয়েকদিন আগে মোস্তাফিজুর রহমানকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এনসিডি কর্নারে তিনি চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে রোগীর নাম নিবন্ধন করার কাজ করে থাকেন। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) হাসপাতালে চিকিৎসক না আসায় তিনি নিজে চিকিৎসক সেজে রোগীর ব্যবস্থাপত্র লিখেছেন।
এ দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, নতুন ভবনের দো’তলায় মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুমন কবির, গাইনী বিশেষজ্ঞ দিলরুবা খাতুন ডায়না, চিকিৎসক অনুপ বসু, হোমিও চিকিৎসক মনিরুজ্জামান ও ইউনানী চিকিৎসক রুহুল আমিন রোগী দেখেন। তাঁদের কেউ কক্ষে নেই। বাইরে থেকে কক্ষে তালাবদ্ধ। এই ভবনের নিচ তলায় ১১৬ নম্বর কক্ষে দুই জন চিকিৎসকের চেয়ার ফাঁকা পড়ে আছে। শিশু ওয়ার্ডে ১২৫ নম্বর কক্ষের সামনে কয়েকজন মাকে সন্তান কোলে নিয়ে বাইরে অপেক্ষায় বসে থাকলে দেখা গেলেও ভিতরে নেই কোন চিকিৎসক। এসময় শুধুমাত্র বহির্বিভাগে ১২৬ নম্বর কক্ষে চিকিৎসক রাফেজা খাতুনকে রোগীদের সেবা দিতে দেখা গেছে।
মহাদেবপুর গ্রামের তিন মাসের শিশু ওবায়দা খাতুনের মা জাহিনুর খাতুন বলের, বাচ্চার জ্বর ও ঠান্ডা সমস্যা নিয়ে বেলা ১০ টার দিকে হাসপাতালে এসেছি। দেড়ঘন্টা ধরে শিশু ওয়ার্ডের সামনে বসে আছি। ডাক্তারের দেখা পাইনি। একই কথা বলেছেন, মোহনপুর গ্রামের তিন বছরের শিশু আলভি হাসান ও বিজয়রামপুর গ্রামের এক বছরের শিশু আবু হুরায়রার স্বজনেরা।
এদিকে হাসপাতালে সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ১১৬ নম্বর কক্ষে এসে চিকিৎসক নাহিদ হাসান ও ১২৫ নম্বর কক্ষে সেকমো আনিছুর রহমানকে ঢুকে রোগী দেখা শুরু করেছেন। যদিও সকাল ৯টা থেকে এই কক্ষ দুইটি ফাঁকা পড়ে ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পাশাপাশি পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সাত জন মেডিকেল অফিসার রয়েছেন। এছাড়া রয়েছেন একজন ইউনানী ও একজন হোমিও চিকিৎসক।
একটি সূত্র বলছে, জেলার অন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তুলনায় মনিরামপুরে চিকিৎসকের সংখ্যা বেশি। কিন্তু এখানকার চিকিৎসকেরা সরকারি আদেশ মেনে হাসপাতালে ডিউটি না করে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের (সেকমো) দিয়ে বহির্বিভাগে রোগী দেখান।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হুমায়ুন রশিদ বলেন, আমার বুধবার রাতে ডিউটি ছিল। চিকিৎসক কম থাকায় আজ জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে তিনজন চিকিৎসক রোগী দেখেছেন। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বিষয়টি হাসপাতালের প্রধান দেখেন। তাঁরা বৃহস্পতিবার কেন আসেননি সেটা স্যার বলতে পারবেন।
মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাইয়াজ আহমদ ফয়সাল বলেন, ঈদের পরে বুধবার থেকে সীমিত পরিসরে হাসপাতাল খুলেছে। অসুস্থ থাকায় আমি বুধ ও বৃহস্পতিবার এই দুইদিন আসতে পারিনি। তিনি বলেন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুমন কবির ও শিশু বিশেষজ্ঞ জেসমিন সুমাইয়া বৃহস্পতিবার ডিউটিতে আসার কথা ছিল। কেন আসেননি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।
যশোরের সিভিল সার্জন মাসুদ রানা বলেন, কার্ডিওগ্রাফার রোগী দেখার কথা না। মনিরামপুর হাসপাতালে কেন এমন হলো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।