জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে এক সিনিয়র ছাত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটি বরাবর পাঁচ পৃষ্ঠার একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম চন্দন সমাদ্দর সোম হিমাদ্রী, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের (৪৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ও জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের (অডিটোরিয়াম) সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬তম ব্যাচ) ছাত্রী।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অভিযুক্ত হিমাদ্রী ও ভুক্তভোগীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক থাকাকালে বিভিন্ন বিষয়ে কথা কাটাকাটি হলে ভুক্তভোগীর শরীরে প্রায়ই হাত তুলতো হিমাদ্রী। এতে স্থায়ীভাবে ভুক্তভোগীর বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধিত হয়।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ২০২২ সালে জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় হিমাদ্রীর সাথে আমার বাকবিতন্ডা হয়, তখন সেখান থেকে চলে আসি। তবে আমার মুঠোফোনটি হিমাদ্রীর কাছে থেকে যায়। পরে ফোনটি নিতে গেলে আমাকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে থাকে হিমাদ্রী। সে সময় আমি প্রতিবাদ করলে সে আমার কানে পরপর তিনটি থাপ্পড় মারে। এতে আমার কানের পর্দা ফেটে যায়। এছাড়া পর্দায় ছিদ্র হয়ে ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে যায়।
তিনি অন্য ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে হিমাদ্রী অন্য মেয়েদেরকে জড়িয়ে আমার সাথে প্রতারণা করে এবং আমি তা জেনে ফেলি। এ অবস্থায় হিমাদ্রী মদ্যপ অবস্থায় আমার সাথে দেখা করতে আসে। সেখান থেকে হিমাদ্রী আমার সাথে জোরপূর্বক কথা বলতে চায়। তবে আমি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানালে, আমাকে টানতে টানতে টারজান পয়েন্টে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে সে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টারজান পয়েন্টের ভেতরে টেনে নিয়ে যায় এবং এলোপাথাড়ি মারধর করতে থাকে। এমনকি আমার চোখে মুখে কামড় দেয়। তখন আমি মাটিতে পড়ে যাই, পরে হিমাদ্রী আমার বুকের উপর উঠে গলা চাপ দিয়ে আমার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে ও আমি যেন চিৎকার করতে না পারি তাই আমার মুখ চেপে ধরে।
অভিযোগপত্রে তিনি আরো বলেন, ২০২৩ সালের মে মাসে হিমাদ্রী জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর আমার সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে। এর কিছুদিন পর সে আমার নামে কুৎসা রটায়, আমি নাকি অন্য ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছি। আমি এর ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তার সাথে কথাকাটাকাটি হয়। তখন হিমাদ্রী আমাকে চড় মারে এবং ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর সে আমার গলাচেপে ধরে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে আমি তার সাথে সম্পর্ক শেষ করে নতুন জীবন শুরু করি। কিন্তু হিমাদ্রী ও আশেপাশের কিছু মানুষজন আমার নামে বিভিন্নজনের কাছে কুৎসা রটানো শুরু করে। যার কারণে আমি মানসিকভাবে মারাত্মক বিপর্যন্ত এবং সামাজিক ভাবে অপদস্থ বোধ করি।
অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘রবিবার বিকালে ওই ছাত্রী একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেটি পড়ে বুঝেছি ওই দু’জনের একটা সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কে যেমন টানাপোড়েন থাকে তেমন। অভিযোগপত্রে ছেলেটি কয়েকবার মেয়েটিকে মারধর করেছেন উল্লেখ রয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা একটি নারী নির্যাতন। ইতিমধ্যে দু’জন সহকারী প্রক্টরকে দায়িত্ব দিয়েছি বিষয়টি নিয়ে একটি সত্যাসত্য যাচাই করতে। রেজিস্ট্রার মহোদয়কেও অবহিত করেছি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চন্দন সমাদ্দর সোম হিমাদ্রী বলেন, ‘অভিযোগপত্রটি আমি দেখিনি এবং প্রশাসন থেকে এখনো আমাকে কিছু বলা হয়নি। সেহেতু আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলবো না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।