৬ মাস আ.লীগ ৬ মাস বিএনপি, দিদি কিন্তু দেখিয়ে দিলেন: পরীমণি

আগের সংবাদ

গনছুটির ঘোষনা দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করল সাতক্ষীরা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীরা

পরের সংবাদ

স্বৈরাচারের দোসর প্রাণিসম্পদের কর্মকর্তা ডা. জয়দেব এখনও বহাল তবিয়তে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫ , ৪:৪২ অপরাহ্ণ আপডেট: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫ , ১০:৩২ অপরাহ্ণ

দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা হিসেবে কাজ করা এবং প্রাণিসম্পদের বিভিন্ন প্রকল্পের ভয়াবহ অনিয়ম দুর্নীতি এর অভিযোগ থাকার পরও বহাল তবিয়তে বাগেরহাটে সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় অবস্থান করছে কৃত্রিম প্রজনন উপ-পরিচালক ডা. জয়দেব কুমার সিংহ। পতিত সরকারের সময় থেকে গোপনে বাগেরহাটের সরকারি হাঁস খামার ও রামপালের প্রাণিসম্পদ দপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্ব নেন ডা: জয়দেব ।

একজন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সমমান পদের অফিসার হওয়া সত্বেও পতিত সরকারের সাবেক ভূমি মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্রের অতি ঘনিষ্ঠজন হিসেবে অনেক অফিসারের আপত্তি সত্ত্বেও জোর করে হেড অফিস ম্যানেজ করে এবং সাবেক মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে নিম্ন পদের দুই অফিসের দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তার ভয়ে ও আতঙ্কে সে সময় কেউই মুখ খোলার সাহস পায়নি অফিসের কোন কর্মচারীরা।

রামপাল এলাকার ভবোতোষ আশুতোষ মন্ডল সহ অনেক খামারি অভিযোগ করে বলেন, প্রাণিসম্পদ অফিসের জয়দেব স্যার কোনদিনই ঠিকমতো অফিসে আসতো না। মাসে এক থেকে দুবার অফিসে এসে অফিস সহকারি অমল বাবুর সাথে নিয়ে গোপনে সমস্ত ভুয়া বিল ভাউচার করে টাকা রাতের আধারে নিয়ে অফিস ত্যাগ করত।

আমরা সেবা তো দূরের কথা তার দেখাও পেতাম না। কিছু বললেই জয়দেব স্যার বলতো” আমার সাথে মন্ত্রীর খুব ভালো সম্পর্ক আমি কাউকেই গুণি না, বেশি কথা বললে ছাড় দেব না, সবাইকে দেখে নেব।

নাম না জাননোর শর্তে বাগেরহাট অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, জয়দেব স্যার রামপাল অফিসকে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের দোসরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন ও বাঁশখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল এর ছত্রছায়ায় দলীয় অফিসে পরিণত করে।

অফিসে এসে গল্প করত এবার কে মন্ত্রী হবে, কে চেয়ারম্যান হবে, কে শাস্তি পাবে, সবই বলে বেড়াত। এদিকে কৃত্রিম প্রজনন কর্মী নিয়োগে নিয়োগ বাণিজ্য, বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষের মাধ্যমে সদস্য পদ দেওয়া, বিনামূল্যে বিতরণযোগ্য উপকরণ টাকার মাধ্যমে বিতরণ করা, ভুয়া বিল ভাউচার এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণের সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করা, মুরগি ও ছাগলের ঘর দেওয়ার নাম করে খামারী প্রতি দশ হাজার টাকা করে নেওয়া সহ এমন কোন অনিয়ম দুর্নীতি নেই যে ডাক্তার জয়দেব স্যার করেননি।বর্তমানে সে মাসে দুই চারদিন অফিসে এসে বেতন তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে ।

তিনি আরো বলেন, বাগেরহাটের চাকুরী জীবনে ডা. জয়দেবের বিরুদ্ধে তিন থেকে চার বার বিভিন্ন অভিযোগ করা হলেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তৎকালীন পরিচালক ডাক্তার নুরুল্লাহ মোহাম্মদ আহসান সেসব অভিযোগ থেকে তাকে বাঁচিয়ে দেন। টাকা পেলে তিনি অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন না।

নাজিম উদ্দীন নামে একজন খামারি আক্ষেপ করে বলেন যে, এত অভিযোগ থাকা সত্বেও কিভাবে একজন স্বৈরাচারীর দোসর এখনো বাগেরহাটে অবস্থান করেন তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। আমরা এতে খুবই হতাশ ও মর্মাহত।

রামপাল এলাকার খাদিজা বেগম ,শিমুল শেখ ,ওমর ফারুক রোবা রানী নামে অনেকে অভিযোগ করেন , ডা: জয়দেব সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন অফিসে কোন রকম অবস্থান করেন । এরপর তার নিজ জেলা সাতক্ষীরাতে তে সার্বক্ষণিক অবৈধভাবে প্রাণী চিকিৎসা করে বেড়ান। এতে বাগেরহাটবাসী তার কাছ থেকে কোন ধরনের সেবা পায় না। এছাড়া প্রকল্প থেকে টাকা আমসাৎ করে ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে খুলনা, ঢাকা, যশোর ও সাতক্ষীরাতে ফ্লাট- জমি ক্রয় করেছেন। বর্তমানে ডা. জয়দেব বাগেরহাট থেকে নিজ জেলা সাতক্ষীরাতে বদলি হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এমন একজন স্বৈরাচারীর দোসর ব্যক্তি এখনো কিভাবে শাস্তি ছাড়াই বাগেরহাটে আছেন তা এক বিরাট বিষ্ময়। ডা : জয়দেবের নাকি মহাপরিচালক থেকে শুরু করে পরিচালক সবই তার বন্ধু ও বড় ভাই। এজন্য তার সবকিছুই মাফ হয়ে যাচ্ছে বলে অনেকেই ধারনা করছেন।

আমিরুল ইসলাম, রতন সরদার নামে বাগেরহাট প্রানী সম্পদ অফিসে সেবা নিতে আসা(কৃত্রিম প্রজনন অফিস) দুই সেবাপ্রর্থী জানান, পরিচালক স্যার নিজেই স্বৈরাচারীর দোসর ছিলেন এজন্য জয়দেবের সমস্ত অনিয়মের টাকার একটা ভাগ ডা: নুরুল্লাহও পেতেন। এজন্য কটাক্ষ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বারবার জয়দেবকে গোপনে একরকম বিনা তদন্তে বারবার বাঁচিয়ে দিতেন। আমরা জয়দেবের পাশাপাশি নুরুল্লাহ স্যারকেও কঠিন শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। কেননা নুরুল্লাহ স্যার তড়িঘড়ি করে বাদীর অনুপস্থিতিতে মনগড়া এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে জয়দেব স্যার কে বাঁচিয়ে দেন। সাবেক পরিচালক নুরুল্লাহ নাকি ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, যশোর জেলার জেলা ও উপজেলার অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে বিশাল অংকের টাকা নিয়ে ভালো রিপোর্ট দিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিতেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত খুলনা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক ডা: জাকির সম্প্রতি জয়দেবের বিরুদ্ধে পুনরায় তদন্ত শুরু করেন। এ তদন্ত প্রতিবেদনও মন গড়া ভাবে করে জয়দেবকে বাচিয়ে ঢাকাতে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। ডাক্তার জয়দেবের বিষয়ে এবং সাবেক পরিচালক ডা: নুরুল্লাহকে নিয়ে ভুক্তভোগী খামারি ও সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগ তাদের দুজনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কর্মকতার মাধ্যমে তদন্ত করে কোন লাভ হয়নি, সবাই তাদেরকে সেইভ করেছে। এজন্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাকে দিয়ে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দূরবর্তী স্থানে বদলিসহ সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করেছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. জয়দেব কুমার সিংহ জানান, আমি নিয়মিত অফিস করে আসছি হয়তবা দুই এদিন বিশেষ কারনের অফিসে যা্ওয়া হয়না । বিষয়টি আমার উর্ধতন কর্তপক্ষ জানে । দূর্ণীতির বিষয়ে তিনি জানান, অনেকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে বার বার ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়