কাবিটার টাকায় সোলিং রাস্তা, টাওয়ার লাইট স্থাপন
চৌগাছায় কাজের বিনিময়ে টাকায় (কাবিটা) প্রায় ১৮.৩০০ কিলোমিটার অর্থাৎ ৬০ হাজার ২৫ফুট রাস্তা সোলিং করে উন্নয়ন করেছে উপজেলা প্রশাসন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। এতে বর্তমান বর্ষা মৌসুমে উপজেলাবাসির চলাচলে সুবিধা হয়েছে।
স্থানীয়রা এই উদ্যোগকে প্রশংসা করছেন। তাদের দাবি, সব সময় কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) দিয়ে মাটির কাজের প্রকল্প নেয়া হতো। ফলে কাজ না করেই টাকা তছরুপের প্রবণতা ছিলো।
উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শীর্ষ জনপ্রতিনিধিরা কাবিটা কাজের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাটির রাস্তার প্রকল্প নিতেন। যার ফলে কাজ বুঝে নেয়া দৃস্কর হতো। অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কাজ না করেও টাকা উঠিয়ে নেয়ার অভিযোগ ছিলো। ২০২৪ সালের ৫আগস্ট পট পরিবর্তনের পর উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সিদ্ধান্ত নেয় এই টাকা দিয়ে সোলিং রাস্তা করা হবে। এতে একদিকে বর্ষা মৌসুমে কাঁদা কম হবে অন্যদিকে কাজ না করে বা কোন রকমে কাজ করে বিল নেয়ার প্রবণতা কমে আসবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেললার ফুলসারা ইউনিয়নে কাবিটা প্রকল্পের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় মোট ৩ কিস্তিতে ৮টি প্রকল্পে ১৭ লক্ষ ১৭ হাজার ৮৭৮টাকা ব্যায়ে মোট ১.৫৩০ কিলোমিটার অর্থাৎ ৫ হাজার ২০ফুট সোলিং রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে ১ হাজার ৯৬৯ ঘনমিটার মাটির কাজ করা হয়েছে।

উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নে ৬টি প্রকল্পে ১৮ লক্ষ ৩৮৬টাকা ব্যায়ে মোট ১.৩৫০ কিলোমিটার অর্থাৎ ৪ হাজার ৪২৯ফুট সোলিং রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে ৩ হাজার ৫৫ ঘনমিটার মাটির কাজ করা হয়েছে।
সিংহঝুলি ইউনিয়নে ৪টি প্রকল্পে ১০ লক্ষ ৬১ হাজার ১৯২ টাকা ব্যায়ে মোট ০.৮২০ কিলোমিটার অর্থাৎ ২ হাজার ৬৯০ফুট সোলিং রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে ৫৮৬ ঘনমিটার মাটির কাজ করা হয়েছে।
ধুলিয়ানী ইউনিয়নে ৪টি প্রকল্পে ১২ লক্ষ ৭৪ হাজার ১৮২টাকা ব্যায়ে মোট ০.৮১০ কিলোমিটার অর্থাৎ ২ হাজার ৬৫৮ফুট সোলিং রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে ১ হাজার ৩৯ ঘনমিটার মাটির কাজ করা হয়েছে।

চৌগাছা সদর ইউনিয়নে ৪টি প্রকল্পে ১২ লক্ষ ৩৫ হাজার ৩১৩টাকা ব্যায়ে মোট ০.৬৩০ কিলোমিটার অর্থাৎ ২ হাজার ৬৭ফুট সোলিং রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে ৯০০ বর্গমিটার মাটি ভরাট ও ১ হাজার ৪৩০ ঘনমিটার মাটির কাজ করা হয়েছে।
জগদীশপুর ইউনিয়নে ৭টি প্রকল্পে ১২ লক্ষ ৮৩ হাজার ৮৩৯টাকা ব্যায়ে মোট ১.৪০০ কিলোমিটার অর্থাৎ ৪ হাজার ৫৯৩ফুট সোলিং রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে ১ হাজার ৯৮৪ ঘনমিটার মাটির কাজ করা হয়েছে।
পাতিবিলা ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পে ২১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৮৮৪টাকা ব্যায়ে মোট ১.৪৫৫ কিলোমিটার অর্থাৎ ৪ হাজার ৭৭৪ফুট সোলিং রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে ৪৬৮ বর্গমিটার মাটি ভরাট ও ৩ হাজার ১০৭ ঘনমিটার মাটির কাজ করা হয়েছে।
হাকিমপুর ইউনিয়নে ১২টি প্রকল্পে ২০লক্ষ ৯৬ হাজার ৬৩২টাকা ব্যায়ে মোট ২.৭১৫ কিলোমিটার অর্থাৎ ৮ হাজার ৯০৮ফুট সোলিং রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে ৭ হাজার ২১৬ ঘনমিটার মাটির কাজ করা হয়েছে।

স্বরুপদাহ ইউনিয়নে ৭টি প্রকল্পে ২২লক্ষ ৫২ হাজার ৬৫৮টাকা ব্যায়ে মোট ১.৫৪০ কিলোমিটার অর্থাৎ ৫ হাজার ৫২ফুট সোলিং রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে ২ হাজার ৪৫ ঘনমিটার মাটির কাজ করা হয়েছে।
নারায়নপুর ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পে ২৬লক্ষ ১৫ হাজার ৪২০টাকা ব্যায়ে মোট ১.৭২০ কিলোমিটার অর্থাৎ ৫ হাজার ৬৪৩ফুট সোলিং রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে ২হাজার ৮৩৯ ঘনমিটার মাটির কাজ করা হয়েছে।
এছাড়া সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নে ১২টি প্রকল্পে ৩১লক্ষ ১০ হাজার ৫৭০টাকা ব্যায়ে মোট ২.০৭০ কিলোমিটার অর্থাৎ ৬ হাজার ৭৯১ফুট সোলিং রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে ৩ হাজার ২৬৫ ঘনমিটার মাটির কাজ করা হয়েছে।

এদিকে টেস্ট রিলিফ (টিআর) রবাদ্দে চৌগাছা পৌরসভার তত্ত¡াবধানে ৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ব্যায়ে চৌগাছা শহরের প্রেসক্লাব চত্বরে টাওয়ার লাইট ও ফোয়ারা এবং টাওয়ার লাইটের অবকাঠামো নির্মান। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ২.২৫৬ কিলোমিটার অর্থাৎ ৭ হাজার ৪০২ ফুট সোলিং রাস্তা নির্মাণ এবং উপজেলার ১১ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ৯০টি মসজিদ, মন্দিও, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঈদগাহ, কবরস্থান, মহাশশ্মান ও বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। সেব কাজের বিপরীতে বরাদ্দ ছিলো ২ কোটি ২৪ লাখ ৮৭ হাজার ৯১৫টাকা।
অন্যদিকে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় ১৪৬.৭৬১৪মেট্রিকটন চালের বিপরীতে ২৬টি প্রকল্পে ১২ হাজার ৬৪ ঘনমিটর মাটির কাজ এবং ১৪৬.৭৬১৪মেট্রিকটন গমের বিপরীতে ২৭টি প্রকল্পে ১০ হাজার ১৭ঘনমিটার মাটির কাজ করা হয়েছে।

এবিষয়ে চৌগাছা পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রকৌশলী তাসমিন জাহান বলেন, টিআর এর অর্থ যেন সর্বোচ্চ কাজে লাগে আমরা সেই চেষ্টা করেছি। পৌরসভায়র মধ্যে একটি টাওয়ার লাইট স্থাপন করা হয়েছে এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। আমরা বরাদ্দের অর্থ যেন সঠিক ভাবে কাজ করা হয় সেই তদারকী করেছি।

উপজেলার পাতিবিলা ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আতাউর রহমান লাল বলেন, বিগত দিনে বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে। আর দলীয় লোকদের নামে বরাদ্দ দিয়ে এসব প্রকল্পের অর্থ তছরুপ করা হয়েছে। সে কারনে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে বেশিরভাগ সোলিং রাস্তার প্রকল্প দিতে বলা হয়। যেসব গ্রামে পাকা রাস্তা করা হয়নি আমরা সেসব মাটির রাস্তা এবার সোলিং করতে পেরেছি। এতে গ্রামের লোকজনও খুশি হয়েছে। তিনি বলেন, সোলিং রাস্তার প্রকল্প নেয়া যে সঠিক ছিলো তা বর্তমান বর্ষা মৌসুমে প্রমাণিত হচ্ছে। আতাউর রহমান লাল বলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামসুন্নাহার নিজে এবং তার অফিসের সহকারীরা সরেজমিনে কাজ পরিদর্শন করে এবার বিল দিয়েছেন। বিগত ১৭ বছর যদি এভাবে তদারকি করে বিল দেয়া হতো তাহলে আরও অনেক বেশি উন্নয়ন দৃশ্যমান হতো।
হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হাসান বলেন, উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে যখন সোলিং রাস্তার প্রকল্প নিতে বলা হয় তখন অনেক চেয়ারম্যানই নাখোশ ছিলেন। তবে উপজেলার ১৮ কিলোমিটারের বেশি সোলিং রাস্তা করার পর এখন সকল চেয়ারম্যানই মনে করছেন এই উদ্যোগটি সঠিক ছিলো। এতে আগের মতো টাকা লুটপাটও হয়নি। আবার দৃশম্যান কাজের পাশাপাশি এবারের বর্ষা মৌসুমে সাধারণ মানুষ চলাচলে উপকৃত হয়েছে। তিনি বলেন, তাছাড়া এবার কাজে অন্য বছরগুলোর তুলনায় তদারকিও বেশি ছিলো। এমনকি আমার ইউনিয়নের একটি প্রকল্পে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তিন তিনবার ভিজিট করে তারপর বিল ছেড়েছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামসুন্নাহার বলেন, নীতিমালা মেনে আমরা কাবিটা ও টিআর বরাদ্দের প্রায় ৮০শতাংশ সোলিং রাস্তার কাজ করেছি। যার সুফল বর্তমান বর্ষা মৌসুমে পাচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা ইসলাম বলেন, টিআর, কাবিখা, কাবিটা কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে আসতে বেশিরভাগ প্রকল্প সোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। এছাড়াও মসজিদ, মাদরাসা, ঈদগাঁহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, মন্দির, শশ্মানসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।