ঝিকরগাছায় আটক ৪যুবকের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

আগের সংবাদ

আল্লাহর আইনের শাসন এ দেশের শান্তি এনে দিতে পারে

পরের সংবাদ

কাঠের ছাউনি আর দুর্নীতির ছত্রছায়া

মোংলায় নারী ইউপি সদস্য জোসনা বেগমের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫ , ৯:৪৮ অপরাহ্ণ আপডেট: জুলাই ২৭, ২০২৫ , ৯:৪৮ অপরাহ্ণ

মোংলার সুন্দরবন ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধির নামে চলছে ক্ষমতার দাপট, দুর্নীতির উৎসব আর মিথ্যাচারের সংস্কৃতি। ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য জোসনা বেগমের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগ—তিনি সরকারি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করে উন্নয়ন কাজের নামে জনসাধারণকে প্রতারিত করেছেন। ফলে তার অপসারণের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে পুরো এলাকা।

অভিযোগ রয়েছে, চলতি বছরের ৫ আগস্ট বর্তমান আওয়ামী সরকারের পতনের পরপরই ইউনিয়ন পরিষদে পুরুষ মেম্বারদের অনুপস্থিতির সুযোগে একক কর্তৃত্ব কায়েম করেন মহিলা ইউপি সদস্য জোসনা বেগম। স্থানীয়রা জানান, ওই সময় থেকেই শুরু হয় ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রভাব খাটানোর খেলা।

জানা যায়, ২ নম্বর ওয়ার্ডের পাখিমারা নদীর ওপর একটি জরাজীর্ণ কাঠের ব্রিজের সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) অফিস থেকে ২ লাখ ৫৭ হাজার টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ গ্রহণ করেন ইউপি সদস্য জোসনা বেগম। কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থে ব্রিজের নিচের ভাঙাচোরা খুঁটি ও মূল কাঠামো সংস্কার না করে, শুধুমাত্র উপরের কাঠের ছাউনি বসিয়েই কাজ শেষ দেখান তিনি। ফলে এলাকাবাসী দুর্ভোগে পড়ে, কারণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই অর্ধসংশোধিত ব্রিজ দিয়েই এখনো চলাফেরা করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কেউ যখন কাজের হিসাব ও প্রকল্পের এস্টিমেট দেখতে চাইলে, জোসনা বেগম ক্ষিপ্ত হয়ে বরং উল্টো তাদের বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর কাছে একটি ভিত্তিহীন অভিযোগ দাখিল করেন। অথচ যাদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন, তারাই পূর্বে নিজেদের অর্থায়নে ব্রিজ সংস্কার করেছিলেন জনস্বার্থে। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সম্প্রতি মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার সুমীর বরাবর একটি লিখিত স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।

ইউএনও শারমিন আক্তার সুমী বলেন, “স্মারকলিপি পেয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে মোংলা উপজেলার পিআইও কর্মকর্তা ‘আমার দেশ’-কে জানান, “ব্রিজের কাজ চুরি করার কোনো সুযোগ নেই, তবুও অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে প্রয়োজনে আমি নিজে সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখব।”

এলাকাবাসীর অভিযোগ, জোসনা বেগম শুধু দুর্নীতিতেই নয়—রাজনৈতিক অপকর্মেও জড়িত। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, শেখ পরিবারের ছত্রছায়ায় তিনি বিগত দিনে নানাভাবে অপকর্ম চালিয়েছেন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে প্রশাসনকে ব্যবহার করেছেন।

গ্রামবাসীর কণ্ঠে ক্ষোভ—“একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে যিনি নিজের স্বার্থে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করেন, তিনি আর জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না। তাঁকে এখনই অপসারণ করতে হবে।”
তাদের অভিযোগ, ক্ষমতা হারালেও তিনি এখনো আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনে রাতের আঁধারে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

এলাকাবাসী আরও বলেন, “যে মানুষ জনস্বার্থে কথা বললেও তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়, তার হাতে ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ নিরাপদ নয়। জোসনা বেগম এখন দুর্নীতির প্রতীক, তাই তাকে অপসারণ করলেই কেবল এই ইউনিয়ন কলঙ্কমুক্ত হবে।”

“উনি জনপ্রতিনিধি নন, উনি একটা দুর্নীতির প্রতীক। আমরা এই কলঙ্কমুক্ত ইউনিয়ন চাই।” – পাখিমারা এলাকার একজন প্রবীণ বাসিন্দা।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য জোসনা বেগমের বক্তব্য জানতে তাঁর ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে ও বাসায় গিয়ে খোঁজ নেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
মোঃ আবু বকর সিদ্দিক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়