ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা খুশি খাতুনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, নকল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি, জাল সাক্ষর করে টাকা আত্নসাৎ, মৌলিক প্রশিক্ষনে অনিয়ম, প্যারেডের ভাতা আত্নসাৎ ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়ন আনসার ভিডিপির দলনেত্রী নাইমা আক্তার ও মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়ন সহকারী আনসার প্লাটুন কমান্ডার মাসুন রানা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উপ-পরিচালক (প্রশাসন), উপপরিচালক (মনিরটিং), উপপরিচালক(সমন্বয়) জেলা আনসার কমান্ড্যান্টের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে ঘুষ গ্রহণ করে নিয়োগ দেয়া, টাকার বিনিময়ে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা, ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে টাকা অত্নসাৎ, নিয়োগ প্রাপ্তদের ডিউটি বন্টনে টাকা নেয়া, আনসার সদস্যদেও দমন পীড়নসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
নাইমা আক্তার জানান, মৌলিক প্রশিক্ষনের প্রার্থীদের বয়সসীমা নির্ধারণ করাসহ এলাকা ভিক্তিত প্রার্থী হতে হবে। কিন্তুু খুশি স্যার কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজের ইচ্ছা মত টাকার বিনিময়ে কাজিরবেড় ইউনিয়নের দলনেতা খাইরুল আলমের সহযোগিতায় বয়সসীমা উত্তীর্ণদের প্রশিক্ষন ও সনদ বিক্রি করেছেন। চলতি বছরের গত ১৬ মে উপজেলা প্রশিক্ষক ও মহিলা প্রশিক্ষিকা বাছাইয়ে মোট ৪৮ জনকে বাছাই করা হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশ প্রশিক্ষর্ণাথী কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যাতা এবং ইউনিয়ন জাল জালিয়াতি করেন খুশি খাতুন।
সদ্য শেষ হওয়া ৪র্থ ধাপের ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষনের প্রশিক্ষর্ণাথী মিজানুর রহমানের (মাষ্টাররোল অনুযয়ী ক্রমিণ নং-২৭) নির্বাচন অফিস থেকে যাচাই কৃত তথ্য অনুযায়ী তার সঠিক জন্ম তারিখ ২২ জুলাই ১৯৮৪ সালে। জালিয়াতির মাধ্যমে তার জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ২২ জুলাই ২০০০ সালে। তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করেলে তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজিনন বলে ফোন কেটে দেন। এমনি ভাবে হাসিনা খাতুন, রেশমা খাতুন, জুলেখা খাতুনসহ অনেককে টাকার বিনিময়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যাতা, এবং ইউনিয়ন জালজালিয়াতি করে প্রশিক্ষন ও সনদ বিক্রি করেছেন উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা খুশি খাতুন।
অন্যদিকে প্যারেডের ভাতা জাল সাক্ষরে আত্নসাৎতের অভিযোগ করেছেন মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়ন সহকারী আনসার প্লাটুন কমান্ডার মাসুন রানা।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করে বলেন, সরকারী ভাবে ২৬ মার্চ ২০২৫ইং ৩২ জন দ্বারা প্যারেড পরিচালনা করার নির্দেশ থাকলেও খুশি খাতুন (উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা) মাত্র ১০ জনকে দিয়ে প্যারেড পরিচালনা করেন। এবং মাস্টাররোলে আমিসহ বাকিদের নাম দিয়ে জাল স্বাক্ষওে সরকারী অর্থ লোপাট করেছেন। প্যারেডে অংশগ্রহন কারিদেরকেও দেওয়া হয়নি কোন সন্মানী এবং তাদেরকে বলে দেওয়া হয়েছে কেউ জিজ্ঞাসা করলে টাকা বুঝে পেয়েছি বলতে।
মাষ্টাররোলে বর্ণিত উপজেলা সহকারী আনসার কোম্পানী কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম, ইউনিয়ন প্লাটুন কমান্ডার জাকির হোসেন, ওয়ার্ড দলনেতা তোহিদ ইসলাম, সহকারী প্লাটুন কমান্ডার কাশেম আলী জানান, এবার ২৬ মার্চ প্যারেডের বিষয়ে তাদেরকে কিছু জানানো হয়নি অথচ মাষ্টাররোলে আমাদের নাম বিদ্যামান এবং ভুয়া স্বাক্ষর করে সে টাকা উত্তলন করা হয়েছে।
মহশপুর উপজেলা আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন অন্য সহকর্মীরাও। তারা জানান, নির্বাচন, দুর্গাপূজা এবং ঈদসহ নানা সময়ে দায়িত্ব বন্টন করা হয় টাকার বিনিময়ে।
অভিযুক্ত খুশি খাতুন জানান, আমি পরিস্থিতির শিকার স্টাফদের উপর বিশ্বাস করে ও নিজে অনেক কিছু যাচাই না করায় আমারও কিছু ভুল আছে। আর এ ভুলের সুযোগ নিয়ে আমাকে ফাঁসাতে চাইছে একটি মহল। তিনি আরও মানুষ ভুলের উর্ধে না তারপরও যদি আপনার মনে চায় রিপোর্ট করতে পারেন।
লিখিত অভিযোগের বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা আনসার-ভিডিপি কমান্ড্যান্ট মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টির তদন্ত পক্রিয়াধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তারা যে নির্দেশনা দেবেন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।