প্রথমবার পর্তুগাল দলে ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়র

আগের সংবাদ

যশোরে ইজিবাইক শ্রমিকদের উদ্দ্যোগে মে দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠিত

পরের সংবাদ

মনিরামপুরে খাদ্যবান্ধবের ৪৬ ডিলার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ ইউএনওর বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: মে ৬, ২০২৫ , ৬:২১ অপরাহ্ণ আপডেট: মে ৬, ২০২৫ , ৮:০৩ অপরাহ্ণ

যশোরের মনিরামপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির  ৪৬ জন ডিলার (পরিবেশক) নিয়োগ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কমিটির সভাপতি ইউএনও নিশাত তামান্নার বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ২০২৪ সালের নীতিমালা অনুসরণ না করে কয়েকটি মাধ্যমের সাথে হাত মিলিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মনগড়া পরিবেশক নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।

গেল ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার উপজেলা কমিটির সভাপতি ইউএনও নিশাত তামান্না ও সদস্য সচিব উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রোজিৎ সাহার যৌথ স্বাক্ষরিত এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

এ নিয়ে বঞ্চিতদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁরা কেউ কেউ এই তালিকা বাতিল চেয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হওয়ার কথা ভাবছেন।

মনিরামপুরের ১৭টি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ২৩ হাজার ৪০০ উপকারভোগীর মাঝে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা দরে মাসিক ৩০ কেজি করে বছরে পাঁচ মাসে চাল বিক্রির জন্য ৪৬ জন পরিবেশক ছিল। যারা সবাই আওয়ামী লীগের অনুসারী। গেল বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কয়েকজন পরিবেশক আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় চাল বিক্রি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এরপর গেল বছর নতুন পরিবেশক নিয়োগ সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা ২০২৪ প্রণয়ন করে খাদ্য মন্ত্রনালয়।

উপজেলা খাদ্য দপ্তরের সূত্রমতে, অধিদপ্তরের লিখিত আদেশ পেয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন পরিবেশক চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় উপজেলা খাদ্য দপ্তর। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১৯৫টি আবেদন পড়ে। সেখান থেকে যাচাইবাছাই শেষে ১৩টি আবেদন বাতিল করে ১৮২টির বৈধতা দেয় উপজেলা কমিটি।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ২০২৪ সালের নীতিমালার ৫ ধারায় বলা আছে, পরিবেশক নিয়োগের আগে আবেদনকারীদের খাদ্যশস্য রাখার মত গুদাম সক্ষমতা আছে কিনা তা সরেজমিন চেক লিস্টের মাধ্যমে যাছাই করতে হবে। এছাড়া আবেদনকারীর সংখ্যা নির্ধারিত পরিবেশক সংখ্যার অতিরিক্ত হলে লটারির মাধ্যমে পরিবেশক চুড়ান্তের নির্দেশনা আছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, এগুলোর কোনটি অনুসরণ না করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উপজেলা কমিটির সভাপতি ইউএনও নিশাত তামান্না কমিটির সদস্যদের নিয়ে মনগড়া ৪৬ জন পরিবেশক নিয়োগের জন্য চুড়ান্ত করেছেন।

এদিকে ইউএনও নিশাত তামান্না ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রোজিৎ সাহা স্বাক্ষরিত পরিবেশক নিয়োগের নির্বাচিত তালিকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, সেখানে  দৈবচয়নের (লটারি) মাধ্যমে গত ২৯ এপ্রিল ৪৬ জন পরিবেশক নির্বাচন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবেশক নিয়োগে বাস্তবে কোন লটারি হয়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রোজিৎ সাহাও লটারি না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরের তথ্যমতে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবেশক নিয়োগ পেতে রোহিতা ইউনিয়ন থেকে ১২ জন, কাশিমনগর ইউনিয়ন থেকে নয় জন, ভোজগাতী ইউনিয়ন থেকে ছয় জন, ঢাকুরিয়া ইউনিয়ন থেকে ১৯ জন, হরিদাসকাটি ইউনিয়ন থেকে আট জন, মনিরামপুর সদর ইউনিয়ন থেকে পাঁচ জন, খেদাপাড়া ইউনিয়ন থেকে ১৩ জন, হরিহরনগর ইউনিয়ন থেকে সাত জন, ঝাঁপা ইউনিয়ন থেকে ১৫ জন, মশ্মিমনগর ইউনিয়ন থেকে ১২ জন, চালুয়াহাটি ইউনিয়ন থেকে ২৪ জন, শ্যামকুড় ইউনিয়ন থেকে ২০ জন, খানপুর ইউনিয়ন থেকে ১৪ জন, দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে ১০ জন, কুলটিয়া ইউনিয়ন থেকে ১২  জন, নেহালপুর ইউনিয়ন থেকে ছয় জন ও মনোহরপুর ইউনিয়ন থেকে তিন জন আবেদন করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৫ জন আবেদনকারীর মধ্যে ১৮২ জনের আবেদন বৈধতা পেলেও লটারির মাধ্যমে পরিবেশক নিয়োগ চুড়ান্ত না করে ইউএনও কয়েকটি মাধ্যমের সাথে যোগসাজশে ৪৬ জন পরিবেশক নিয়োগ চুড়ান্ত করেছেন। আর এক্ষেত্রে ওই মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে পরিবেশকপ্রতি একলাখ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। যারমধ্যে ইউএনও ১২-১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

কাগজপত্রে বৈধতা পেয়েও চুড়ান্ত পরিবেশক নিয়োগ না পাওয়া কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা খাদ্যবান্ধবের পরিবেশকের জন্য আবেদন করেছিলাম। আমাদের বিষয়ে সরেজমিন কোন তদন্ত হয়নি। ডিলার (পরিবেশক) নিয়োগ চুড়ান্তের জন্য লটারির কথা বলা হলেও আমাদের উপজেলায় ডাকা হয়নি। লটারি না করে হঠাৎ শুনি টাকার বিনিময়ে ভাগবাটোয়ারা করে ৪৬ জন ডিলার নিয়োগ হয়ে গেছে। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকের গুদামঘর নেই বলে অভিযোগ বঞ্চিতদের।

এই বিষয়ে মনিরামপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রোজিৎ সাহা বলেন, খাদ্যবান্ধবের পরিবেশকের জন্য ১৯৫ টি আবেদন পড়েছে। লোকবল কম থাকায় আমরা আবেদনকারীদের গুদামের সক্ষমতা যাচাইয়ের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করতে পারিনি। গত ২৯ এপ্রিল বিকেলে ইউএনওর কক্ষে উপজেলা কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে ৪৬ জন পরিবেশক নিয়োগের জন্য চুড়ান্ত করা হয়েছে।

লটারির মাধ্যমে পরিবেশক চুড়ান্ত করা হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নে ইন্দ্রোজিৎ সাহা বলেন, লটারি হয়নি। ইউএনওর সিদ্ধান্তে কমিটি কাগজপত্র যাচাইবাছাই করে তালিকা চুড়ান্ত করেছে।

এদিকে খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রোজিৎ সাহার বক্তব্যের সাথে কমিটির সভাপতি ইউএনওর বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, নীতিমালায় লটারির কথা উল্লেখ ছিল। আমরা কয়েকটি ইউনিয়নে পরিবেশক নিয়োগে লটারি করেছি। তখন দেখেছি বিতর্কিতদের নাম আসছে। এজন্য পরে আর লটারি না করে
যাচাইবাছাই শেষে ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি এই বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাননি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়