পাটকেলঘাটায় ৩৫ পিচ ইয়াবাসহ আটক -১

আগের সংবাদ

কালীগঞ্জে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় আলমসাধু চালক নিহত

পরের সংবাদ

সুপেয় পানির জন্য বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে হয় তাদের,

কপিলমুনিসহ আশপাশের এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৪ , ৬:১৩ অপরাহ্ণ আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৪ , ৬:১৩ অপরাহ্ণ

ভোর হলেই পানির সন্ধানে ছুটতে হয়। বর্ষা এবং পুকুরের পানিই তাদের একমাত্র ভরসা। পানি কষ্ট নিবারণে মানুষের দীর্ঘ পথ পায়ে হাটা। সকাল-বিকাল- দুপুর পানির পাত্র গুলো ঘিরে নারী-পরুষ ও শিশুদের জটলা। কলসি, বালতি, ড্রাম, জগ, যার যা আছে, তা নিয়ে ছুটে যান পানির কাছে। বেঁচে থাকার জন্য সুপেয় পানির কোন বিকল্প নেই। সেই সুপেয় পানির সংকট টাই সবচেয়ে বেশি। কোথাও আবার গোসল, রান্নাবান্না আর সেচের পানির কষ্টটা ও তীব্র হয়ে উঠেছে।

খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ও লতা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামের চিত্র এটি। তবে এই এলাকা গুলোর মধ্যে লতা ইউনিয়নের শামুকপোতা, বারিবুনিয়া, গদারডাঙ্গা, পুটিমারী, পুতুলখালী, হাড়িয়া, পানারাবাদ, তেতুলতলা, হানি, কাঠামারী, গংগারকোনা, লতা, সহ ইউনিয়নের প্রায় সবকটি গ্রাম, কপিলমুনি ইউনিয়নের চিনেমলা, গোয়ালবাথান, প্রতাপকাটি, কজিমুছা, মালথ, নাবা ভৈরবঘাটা, আদর্শগ্রাম, বিরাশী, শ্যামনগর, বারুইডাঙ্গা, শিলেমানপুরের অবস্থা সবচেয়ে সংকাটাপন্ন। খাদ্য সংকটে যেমন দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, পানির দুর্ভিক্ষ তাদের কাছে ঠিক তেমনই। কপিলমুনি ও লতা ইউনিয়নের হাজারো মানুষ বছরের পর বছর পানি কষ্টে দিন কাটাচ্ছে ।

ঘূর্ণিঝড় আইলার পর এএলাকায় সুপেয় খাবার পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকায় পানি সমস্যা সমাধানে স্থাপন করা হয়েছে পি.এস.এফ ও রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের মতো প্লান্ট, যা সংরক্ষণের দায়ভার দেওয়া হয় স্থানীয়দের ওপর। এ কারণে এগুলো নষ্ট হয় দ্রুত। পরে সেগুলো আর মেরামত বা সংরক্ষণ করা হয় না। এছাড়া এনজিওগুলো পৌর এলাকায় ওভারহেড ট্যাংকের মাধ্যমে পাইপলাইনে পানি সরবরাহ, রিভার্স অসমোসিস প্লান্ট, বায়ো স্যান্ড ফিল্টার বসানোর পর সেগুলোও নষ্ট হচ্ছে। প্রকৃতিনির্ভর টেকসই প্রকল্প গ্রহণ না করায় এর সুফল পাচ্ছে না মানুষ।

প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে; কিন্তু পানিকষ্ট ঠিক আগের মতোই রয়ে গেছে, এমনটাই জানালেন এলাকার বাসিন্দারা। কপিলমুনি ও লতা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে যে কয়টি পানির প্লান্ট রয়েছে তা থেকে দিনের প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করার কাজ শুরু হয় ভোর থেকে। কার আগে কে যাবে, লাইনে আগে থাকার চেষ্টা সবার। আগেভাগে খাবার পানির কলসিটা ঘরে তুলতে পারলে অন্যান্য কাজে সময় দেওয়া সম্ভব হবে। সকাল ও বিকালে পানির ফিল্টারের কাছে সংগ্রহকারীদের লাইন দীর্ঘ হয়। পানির সংকট বারো মাসই থাকে। তবে মার্চ এপ্রিল ও মে মাসে তীব্রতাটা একটু বেশি।

কপিলমুনি ইউনিয়নের কাজিমুছা গ্রামের দাউদ আলী কাগুজী বলেন, কাজিমুছা গ্রামে দুটি ফিল্টার ছিল কিন্তু একটি পুকুরের ফিলটার বন্ধ করে দেওয়ায় মানুষের ভোগান্তি বেড়ে গেছে। একটি ফিল্টার থেকে প্রায় ৭০০ পরিবারের পানি সংগ্রহ করতে হয়। তাছাড়া যে পুকুরের ফিল্টার থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়, তদারকির অভাবে মাঝে মাঝে পানি নষ্ট হয়ে খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়। বর্ষা কাল আসার আগেই পুকুরের পানি প্রায় শুকিয়ে যায়।

লতা ইউনিয়নের শেফালী মন্ডল বলেন, চারিদিকে শুধু লোনা পানি, মিঠা পানির পর্যাপ্ত পুকুর না থাকাই বর্ষার পানিই একমাত্র আমাদের ভরসা। বর্ষা হলে ড্রামে বা অন্য কোন পাত্রে পানি ধরে রাখতে হয়, যা খাওয়া ও রান্নার কাজে সারা বছর ব্যবহার করতে হয়। ভৈরবঘাটা আদর্শগ্রামের লাকি বেগম জানান, এক কলসি খাবার পানি সংগ্রহ করতে তাদের প্রায় চার কিলোমিটার হাটতে হয়। আসা যাওয়া যাতায়াত প্রায় আট দশ কিলোমিটার। যেতে আসতে প্রায় দুই ঘন্টা সময় লাগে। এক কলসি পানিতে দিন পার হয়না বলে একই সঙ্গে পানি সংগ্রহে ছুটেন আরও দু,তিন জন।

এলাকা ঘুরে জানা যায়, ঘরে একবেলা খাবার যোগাড়ের চেয়েও এই এলাকায় মানুষের বিশুদ্ধ খাবার পানি যোগাড়ে বেশী সমস্যা। চাল,ডাল,নুন,তেল সবই  যোগাড় হলো; কিন্তু ঘরে সুপেয় পানি নেই। এর মানে সবকিছুই অচল। গোসল, রান্না করা, থালাবাসন ধোয়া এমনকি গরু-ছাগলও হাঁসমুরগির পিপাসা মেটাতে ভরসা দূর থেকে আনা এই পানি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, খুলনার ৩৩ শতাংশ মানুষ খাওয়ার পানির সংকটে ভুগছেন। তবে বাস্তবের চিত্র ভিন্ন। ২০২১ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) জরিপের ফলাফল বলছে, খুলনার কয়রা-পাইকগাছা উপজেলায় বসবাসকারী ৭৩ শতাংশ মানুষ অনিরাপদ লবণাক্ত পানি পান করছেন। প্রতি লিটারে এক হাজার মিলিগ্রামের বেশি লবণাক্ততা থাকলে তা পানযোগ্য নয় হিসেবে বিবেচিত হয়। অথচ ওই উপজেলাগুলোর পানিতে প্রতি লিটারে ১ হাজার ৪২৭ মিলিগ্রাম থেকে ২ হাজার ৪০৬ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণাক্ততা আছে। এসব এলাকার ৫২ শতাংশ পুকুর ও ৭৭ শতাংশ নলকূপের পানিতে বেশি মাত্রায় লবণাক্ততা পাওয়া গেছে।

মার্চ ২২, ২০২৪, at ১৮:১০ (GMT+06) রূপ্র/আক/ঢাঅ/আ.হা.

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়