১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

আগের সংবাদ

কপোতাক্ষ নদ খননে অনিয়ম

পরের সংবাদ

অনুমতি ছাড়াই টাউন হল মাঠ দখল করে মেলার কাজ শুরু

প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৪ , ১:১৪ অপরাহ্ণ আপডেট: মার্চ ১৬, ২০২৪ , ১:১৪ অপরাহ্ণ

যশোরের জেলা প্রশাসক জানেন না, জানে না যশোর ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। অথচ যশোরের ঐতিহ্যবাহী টাউন হল মাঠে ইনস্টিটিউটের নাম ব্যবহার করে ‘ঈদ মেলার কাজ শুরু করেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাবু ওরফে পটল বাবু। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে স্টল বরাদ্দের নামেও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। যা নিয়ে হতবাক সবাই।

স্বাধীনতার মাসে প্রতি বছরই টাউন হল মাঠে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দেয়া হয় বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা। অথচ কাউকে কিছু না জানিয়েই পটল বাবুর এ মেলার আয়োজন মেনে নিতে পারছেন না বীরমুক্তিযোদ্ধারা। অন্যদিকে, বিসিক উদ্যোক্তা মেলা শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ফের টাউন হল মাঠে মেলার কাজ শুরু হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ব্যবসায়ীরা।

গত ১০ মার্চ টাউন হল মাঠে শেষ হয়েছে ১০ দিনব্যাপী বিসিক উদ্যোক্তা মেলা। মেলা শেষ হওয়ার পরে ইনস্টিটিউটে শুধুমাত্র একটি দরখাস্ত দিয়ে পটল বাবু টাউন হল মাঠ নিজের দখলে নেন। পরের দিন টাউন হল মাঠে বাঁশ-খুটি ফেলেন। ১১ মার্চ মাঠের মধ্যে একটি তাবু তৈরি করে সেখানেই থাকতে শুরু করেন পটল বাবুর লোকজন। এরমাঝে ১৩ মার্চ নড়াইলের মানিক সিকদার নামের এক ব্যক্তিকে মাঠে এনে বাঁশ পুতে যশোর ইনস্টিটিউটের নাম ব্যবহার করে ঈদ মেলার কাজের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। আর সেই ছবি ফেসবুকে দিয়ে স্টল বরাদ্দের বাণিজ্য শুরু করেন বাবু ও তার লোকজন। মেলার অনুমতি না পেয়েই দোকান বরাদ্দের নামে টাকা হাতানো শুরু করেন তারা।

সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজ এলাকার বাসিন্দা দোকানদার আকতার হোসেন অভিযোগ করেন, মেলায় চটপটি, ফুসকাসহ ফুড আইটেমের একটি প্যাভেলিয়ন বরাদ্দের জন্য পটল বাবু তার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। এক পর্যায়ে তিনি নগদ ২০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু পরে জানতে পারেন মেলার কোনো অনুমতিই হয়নি। এখন তিনি সেই টাকা ফেরত চাইলে পটল বাবু তালবাহানা করছেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ব্যবসায়ীরা সারা বছর ঈদ মৌসুমের জন্য অপেক্ষায় থাকে। এমন সময় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এসে যশোরে ব্যবসা করবে, এটা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মেনে নেবেনা। তিনি আরও বলেন, টাউন হল মাঠে মার্চ মাসে বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননাসহ নানা আয়োজন করা হয়। পহেলা বৈশাখেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। এমন সময় এই মাঠে মেলা মেনে নেয়া হবে না।

শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, কয়েক বছর আগেও এই পটল বাবু মার্চ মাসে টাউন হল মাঠ দখল করে মেলার আয়োজন করেছিলেন। তা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। এবারও তাই তবে। একইসাথে তিনি পটল বাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

এ বিষয়ে জানতে যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাজ্জাদ হোসেন বাবু তাদের কাছে মেলার আবেদন করেছিলেন। যার সূত্র ধরে ইনস্টিটিউটের সভাপতি যশোরের জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনটি জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে এখনো অনুমতি দেয়া হয়নি। ফলে ইনস্টিটিউটের মাঠে কাজ শুরু করার সুযোগ নেই। যেটা হয়েছে সেটা স্রেফ প্রতারণা। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দোকান বরাদ্দের নামে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর দায় ইনস্টিটিউট নেবেনা।’

যশোর ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আবরাউল হাসান মজুমদার বলেন, যেখানে এখনো অনুমতি দেয়া হয়নি সেখানে অবকাঠামোগত কাজ শুরুর প্রশ্নই ওঠেনা। বিষয়টি নিয়ে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাজ্জাদ হোসেন বাবু ওরফে পটল বাবু বলেন, ‘আমাদের সাথে ইনস্টিটিউটের কথা হয়েছে। কিন্তু সেটা এখনো ফাইনাল হয়নি।’ অনুমতি না পেয়েই তাহলে কাজ শুরু করা হয়েছে কেনো জানতে চাইলে তিনি নিরুত্তর ছিলেন। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন বাবু।

উল্লেখ্য, পটল বাবুর বিরুদ্ধে যশোর কোতয়ালি থানায় নাশকতাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটির চার্জশিটে তিনি অভিযুক্তও হয়েছেন। এর বাইরেও মেলাজগতে তার বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি একজন মেলা ব্যবসায়ীর ঘরের তালা ভেঙে মালামাল লোপাটেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

মার্চ ১৬, ২০২৪, at ১৩:০৮ (GMT+06) রূপ্র/আক/ঢাঅ/আ.হা.

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়