নদীতে ভাটার টান। তীরে নারী পুরুষ ঠেলছে নেট জাল। দূর থেকে জাল ঠেলতে দেখা গেলেও কী মাছ যে ধরছেন তা বোঝার উপায় নাই। নদীর তীরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত জাল ঠেলে চলেছেন তারা। মাঝে মধ্যে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে জালে আটকে পড়া ক্ষুদ্র আকৃতির গলদা চিংড়ির রেণু ও বাগদার পোনা নদীর চরে রাখা গামলাতে উঠিয়ে রাখছেন। এমনই দৃশ্যের দেখা মেলে বাংলাদেশে সর্ব দক্ষিণের জনপদ খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছার) নদীর তীরে।
প্রতিদিন ভাটার শুরুতেই নদীতে নেমে শেষ পর্যন্ত এভাবে বাগদার পোনা ধরেন তারা। সমুদ্রের উপকূলীয় নদী ও খাল অববাহিকায় বসবাসরত বেশিরভাগ মানুষের জীবন যুদ্ধের আরেক নাম “জালটানা”। এই জালটেনে রেণু মাছ ধরে হয় অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের সংস্থান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কপোতাক্ষ নদের তীরে জাল টেনে রেণু পোনা গুনছিলেন দীনু বিশ্বাস (৪৫)। তার কাছে শুনতেই তিনি বলেন, জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভর করে রেণু বাগদার পোনা ধরা হয়। প্রতিদিন ভাটার শুরুতে নদীতে নামি আর শেষ পর্যন্ত মাছের রেণু ধরি। এখান থেকে যে পোনা পাওয়া যায় সেগুলো ফুড়ির এসে নিয়ে যায় তার কাছে বিক্রি করি। প্রতি পিস রেণু এক টাকা করে বিক্রি করি। এতে দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। কোনো কোনো দিন কম-বেশিও হয়।
তিনি বলেন, জোয়ার ভাটা হিসাব করে কখনো সাত-সকালে আবার কখনো রাতের বেলায় রেণু ধরতে হয়। এই দিয়ে স্ত্রী ও এক ছেলে, এক মেয়েসহ চার সদস্যের সংসার চলে আমার। মাঝে-মধ্যে কৃষি কাজও করতে হয়। তবে মাছের পোনা ধরে বাজারে ও ফুড়ির কাছে বিক্রি করে সংসার চলাতে হয়। শুধু দীনু বিশ্বাস নয়, সন্ধ্যা, আমেনা, ছকিনা, খাদেজা, খালেক, ইমদাদ, মুমিন, ফাতেমাসহ উপকূলের অসংখ্য মানুষ নদীতে রেণু ধরে উপার্জন করে সংসার চালান।
সরেজমিনে কয়েক উপজেলার উপকূলীয় নদী ও খাল অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, হতদরিদ্র, স্বামী পরিত্যক্তা, বনদস্যু ও বাঘের কবলে জীবন হারানো মানুষের স্ত্রী-সন্তানদের মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহর দৃশ্য। সন্তান সহ স্বামীর সংসার থেকে বিতাড়িত মহিলারা তাদের সন্তানের মুখে ভাত তুলে দিতে তাদের লেখাপড়ার খরচের জন্য সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলীয় নদী ও খালের পাড় দিয়ে হাতে টানা জাল দিয়ে চিংড়ি ও পারশে মাছের পোনা ধরে জীবিকা নির্বাহর দৃশ্য।
৩নং লতা ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাস বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে ৫০ পরিবারে শতাধিক মানুষ তারা নদীতে জাল টেনে মাছ রেণু পোনা ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। পোনা ধরেই চলে তাদের সংসার। এসব অসহায় নারীদের ভিজিডি, ভিজিএফ কার্ড ও চাল দেওয়া হয়। এছাড়া দুর্যোগের সময়ে সাহায্য দেওয়া হয়।
নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনমান পরিবর্তনের জন্য কাজ করা হচ্ছে। তারা সরকারী সকল সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা এসব বাসিন্দাদের দেওয়া হয়। কেউ বাদ পড়লে আমাকে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।