“তুলিতে আঁকা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ক্ষত চিহ্ন”
শিশু নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান ঘটনার প্রতিবাদ এবং সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (লিডো) আয়োজন করেছে সচেতনতামূলক চিত্র প্রদর্শনী। “তুলিতে আঁকা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ক্ষত চিহ্ন” প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের শহরতলী প্ল্যাটফর্মে অবস্থিত ‘স্কুল আন্ডার দ্যা স্কাই’ প্রাঙ্গণে।
লিডোর “ইয়ুথ জার্নালিস্ট চেঞ্জমেকার গ্রুপের” প্রতিনিধিরা— জেসমিন আক্তার, সাথী আক্তার, হাসান আলী মুসাফির, মুন্নি, মিম, হাসান ও শিউলির নেতৃত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। সভাপতিত্ব করেন লিডোর নির্বাহী পরিচালক জনাব ফরহাদ হোসেন।
সাম্প্রতিক সময়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে পাঁচ বছরের এক কন্যাশিশুর উপর সংঘটিত শারীরিক ও মানসিক নির্মম নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে এই আয়োজন করা হয়। বর্তমানে শিশুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিও) চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে শিশু নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এই সময়ে ১,৯৩৩ জন শিশু নিহত, ২,৭৪৪ জন ধর্ষণের শিকার এবং ২,১৫৯ জন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে জনাব ফরহাদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের অনেক শিশু রাস্তায় বসবাস করে, যা অত্যন্ত অমানবিক। রাস্তায় থাকা শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার আছে, এটি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার।”
এছাড়া বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)-এর প্যারালিগ্যাল প্রতিনিধি হোসনেয়ারা মনি বলেন, “আজকের আয়োজনে পথশিশুরা তাদের প্রতিভা ও আর্টের মাধ্যমে নির্যাতনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। এতে যেমন তাদের সৃজনশীলতা ফুটে উঠেছে, তেমনি সমাজকে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে নতুন করে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেছে।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে শিশুদের নিয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা হয় এবং পরবর্তীতে তারা চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার প্রতি নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করে। শিশুদের আঁকা ছবি দিয়েই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংক্ষিপ্ত র্যালি ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে দুপুরের খাবার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে লিডোর নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ হোসেন ও কার্যনির্বাহী সদস্য তুষার আহমেদ ইমরান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি নির্যাতিত শিশুটিকে দেখতে যান এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— লিডো নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য তুষার আহমেদ ইমরান, পরিচালক-অর্থ ও প্রশাসন মুরশিদা আক্তার কান্তা, কনসালটেন্ট আজিজুর রহমান, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ওসি রেদোয়ান হোসেন, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)-এর প্যারালিগ্যাল প্রতিনিধিবৃন্দ, ঢাকা রেলওয়ে থানার নারী শিশু এবং বয়স্ক হেল্প ডেস্ক কর্মকর্তা হালিমা খাতুন, স্কুল আন্ডার দ্যা স্কাই কমলাপুর ইনচার্জ মাসুদ মাহাতাব, সোশ্যাল মোবিলাইজার মাহফুজুর রহমান, শেল্টার মাদার সাহেলা খান রিমু, স্ট্রিট এডুকেটর রেহানা পারভীনসহ স্থানীয় কমিউনিটি সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
উল্লেখ্য, লিডো একটি অলাভজনক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, যা ২০০০ সাল থেকে পথশিশুদের সুরক্ষা, শিক্ষা, পুনর্বাসন এবং পরিবার পুনর্মিলন কার্যক্রমে কাজ করছে। সংস্থাটি এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।