মোল্লাহাটে মাদক কারবারী গ্রেফতার, ১২৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার

আগের সংবাদ

সেলাঙ্গরে অভিযানে ৯৪ অবৈধ বিদেশি আটক

পরের সংবাদ

সোনাগাছির অন্ধকারে খুঁজে পেলেন হারানো স্ত্রী

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫ , ১:২৩ অপরাহ্ণ আপডেট: আগস্ট ২১, ২০২৫ , ১:২৩ অপরাহ্ণ

কলকাতার সোনাগাছি বস্তির অন্ধকার গলিতে এক অচেনা মানুষ ঢুকে পড়লেন। প্রথমে সবাই ভেবেছিল তিনি স্বাভাবিকভাবেই এসেছেন, কিন্তু আসলে তার উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। সেখানে গিয়ে তিনি স্বপ্না নামের এক নারীর সঙ্গে কথা বলেন। স্বপ্না ছিলেন এই বস্তিরই একজন যৌনকর্মী।

প্রথমে আলাপচারিতার একপর্যায়ে লোকটি জানান, তিনি বিবাহিত এবং স্ত্রীকে খুঁজতে এসেছেন। স্বপ্না অবাক হয়ে জানতে চান—“বউ খুঁজতে এসে এখানে?” তখন লোকটি পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে রাতে স্ত্রী উত্তরা সঙ্গে শপিং শেষে ফিরছিলেন। হঠাৎ চারজন দুষ্কৃতকারী তাদের মুখ চেপে ধরে অচেতন করে ফেলে। জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেকে হাসপাতালে পান, কিন্তু স্ত্রী ছিলেন নিখোঁজ। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও স্ত্রীকে কোথাও পাওয়া যায়নি।

২৬ দিন পর হঠাৎ স্ত্রীর ফোন আসে। তিনি শুধু এতটুকুই বলতে পেরেছিলেন—“সোনাগাছিতে এসো, আমাকে নিয়ে যাও, আমার নাম নিশা।” তারপর ফোন কেটে যায়। সেই থেকে বারবার চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তাই আজ তিনি স্ত্রীকে খুঁজতে এসেছেন এই অন্ধকার গলিতে।

তার এই কাহিনী শুনে স্বপ্না সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি জানালেন, “আপনার স্ত্রীকে পেয়েছি। আমারই বিল্ডিংয়ের পাশের ঘরে সে থাকে। এখানে নতুন বলে মোবাইল ব্যবহারের সুযোগ পায় না। হয়তো কোনো ক্রেতার ফোন থেকেই আপনাকে একবার কল করতে পেরেছিল।”

এরপর পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে লোকটি উদ্ধার করেন স্ত্রী উত্তরাকে, যিনি বাধ্য হয়ে ‘নিশা’ নামে সেখানে দিন কাটাচ্ছিলেন।

উদ্ধারের পর কৃতজ্ঞতা জানাতে তিনি আবার দেখা করতে যান স্বপ্নার সঙ্গে। কৃতজ্ঞ স্বরে তিনি জানতে চান, “কত টাকা আপনাকে দিতে হবে?” কিন্তু স্বপ্না বলেন, “টাকা নয়, আপনি আমার চোখ খুলে দিলেন। এটা আমার কাছে অনেক বেশি মূল্যবান।”

তিনি তার নিজের করুণ কাহিনীও শোনান—
তিন বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন গ্রামের এক যুবককে। কিন্তু মাত্র ১৯ দিনের মাথায় সেই স্বামী তাকে ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় এই অন্ধকারে। এরপর থেকে পালানোর চেষ্টা করলেও আর মুক্তি পাননি। তার বিশ্বাস ছিল—সব পুরুষ একই রকম, সবাই বিশ্বাসঘাতক।

কিন্তু ওই ব্যক্তির স্ত্রীকে উদ্ধারের দৃঢ়তা আর ভালোবাসা দেখে তার ভুল ভেঙে যায়। তিনি বলেন—
“আজ বুঝলাম সব পুরুষ এক নয়। কেউ স্ত্রীকে বিক্রি করে দেয়, আবার কেউ নিজের জীবন বাজি রেখে স্ত্রীকে ফিরিয়েও আনে। আপনার ভালোবাসা আমার চোখ খুলে দিয়েছে বাবু।”

শেষে স্বপ্না কৃতজ্ঞ হয়ে বিদায় দেন দম্পতিকে। আর সেই সঙ্গে রেখে যান এক অমূল্য শিক্ষা—
“সব পুরুষ সমান নয়। কেউ রেখে যায়, কেউ ফিরিয়ে আনে।”

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়