প্রস্তুত হচ্ছে নতুন আইন
সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার বন্ধ করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট চারটি আইনের ধারাগুলো বাতিল করে নতুন অধ্যাদেশ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই পরিবর্তনের ফলে, ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক দল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে না। সকল প্রার্থীই হবেন স্বতন্ত্র, অর্থাৎ নির্দলীয়।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল ও সংস্কার কমিশন দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বিলুপ্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছিল। তারা মনে করেন, দলীয় প্রতীক থাকায় স্থানীয় রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় রাজনীতির প্রভাব প্রবল হয়ে পড়ে, ফলে যোগ্য ও নিরপেক্ষ প্রার্থীরা পিছিয়ে পড়েন।
এদিকে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে চারটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে। পরবর্তী ধাপে তা উপদেষ্টা পরিষদের পর্যালোচনার মাধ্যমে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুরাইয়া আখতার জাহান বিষয়টিতে মন্তব্য করতে রাজি না হলেও, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. জিয়াউল হক খসড়া পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিএনপি, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দল দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, “দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়ার বিষয়টি বিএনপির দীর্ঘদিনের দাবি এবং এটি আমাদের ৩১ দফার অংশ।”
বিশেষজ্ঞ মত:
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, আলাদা করে চারটি অধ্যাদেশ না এনে একটি সমন্বিত অধ্যাদেশেই এই পরিবর্তন আনা যেত। একইসঙ্গে তিনি মনে করেন, স্থানীয় নির্বাচন একদিনে নেওয়া ও দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংঘাত হ্রাস পাবে।
বর্তমানে দেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় পাঁচটি স্তর রয়েছে — ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (৪,৫৮১টি)। যদিও জেলা পরিষদে সরাসরি ভোট হয় না, তাই সেখানে দলীয় প্রতীকের বিধান বাতিলের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
যদি এই অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়, তাহলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনব্যবস্থায় এটি হবে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। দলীয় প্রভাব মুক্ত একটি নির্বাচন কাঠামো গড়তে এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।