যশোরের মনিরামপুরের নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে একটি গণপাঠাগার রয়েছে। এক সময় বেসরকারি সংস্থা ব্রাক পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনে পাঠাগারটি পরিচালনা করত। ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারে পাঠাগারটি পাঠক শূন্য হয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। এই বন্ধ পাঠাগারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) দপ্তর থেকে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান ফারুক হোসেনের অনুরোধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না নিজেই প্রকল্পটি পছন্দ করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাইফুল ইসলাম ও পরিষদের সচিব মিজানুর রহমান।
অভিযোগ উঠেছে, পাঠাগারে একটি চেয়ার ও দুটো স্টিলের বুকসেলফ নামমাত্র টাকা খরচ করে বাকি টাকা পিআইও দপ্তর ও পরিষদের সচিব মিজানুর রহমান ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে। ইউএনওর পছন্দের প্রকল্পের প্রথম কিস্তির ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে পিআইও দপ্তর ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যা নিজেই স্বীকার করেছেন পরিষদের সচিব মিজানুর রহমান।
স্থানীয়রা বলছেন, ব্রাকের এক নারী কর্মী পাঠাগারটি দেখভাল করতেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ওই নারী কর্মী পাঠাগারের দায়িত্ব ছেড়ে কিছু বই, চেয়ার টেবিলসহ আসবাবপত্র রেখে চলে যান। ২০২১ সালে করোনাকালীন পাঠক শূন্য হয়ে পড়ে পাঠাগার। সেই থেকে বন্ধ রয়েছে পাঠাগারটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,২০২৪-২৫ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় ১ম ও ২য় পর্যায়ে নেহালপুর গণপাঠাগারের জন্য তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মিজানুর রহমান এক মাস আগে নিজে প্রথম কিস্তির ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে তুলেছেন। এরপর সেখান থেকে ৫৬ হাজার ২৫০ টাকা কেটে রেখে সচিবের হাতে ৯৩ হাজার ৭৫০ টাকা দিয়েছে পিআইও দপ্তর। যা মোট উত্তোলন করা টাকার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
সচিব মিজানুর রহমান হাতে পাওয়া টাকা থেকে ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ করে বাকি টাকা পকেটে ভরেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য বলেন, পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনের একটি কক্ষে ব্রাক পাঠাগারটি পরিচালনা করত। তারা এখন আর আসে না। ঘরটির ছাদ দিয়ে পানি পড়ত। আমরা মেম্বররা বসার জন্য ওই ভবনের একটি কক্ষ ঠিকঠাক করে নিয়েছিলাম। সেই কক্ষে সচিব পাঠাগারের জিনিসপত্র রেখেছে। নতুন করে পাঠাগারে তিন লাখ টাকা বরাদ্দের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।
সরেজমিন দেখা গেছে, নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ছোট্ট একটি কক্ষে ঠাসাঠাসি করে ১০টি চেয়ার, তিনটি ছোট টেবিল, একটি আলমারি ও তিনটি বুকসেলফ রাখা আছে। যেখানে পুরোন কিছু বই রাখা আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আসবাবপত্রগুলো কোন এক জায়গা থেকে এনে গুদামজাত করা হয়েছে। যেখানে পাঠক বসে বই পড়ার পরিবেশ নেই। নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনের এক দোকানি বলেন, পাঠাগারে এখন কেউ আসে না। দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।
নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মিজানুর রহমান বলেন, পাঠাগারটি অনেক পুরোনো। পরিষদের সদ্য প্রয়াত চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন পাঠাগার চালুর জন্য ইউএনওর কাছে বরাদ্দ চেয়েছেন। পরে ইউএনও পাঠাগারে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।
সচিব আরও বলেন, পাঠাগার সংস্কার ও আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য তিন লাখ টাকার মধ্যে প্রথম কিস্তির দেড় লাখ টাকা তোলার পর পিআইও অফিস টাকা কেটে রেখে আমাকে ৯৩ হাজার ৭৫০ টাকা দিয়েছে। আমি ৮১ হাজার টাকা খরচ করে তিনটি আলমারি, একটি টেবিল ও একটি চেয়ার কিনেছি। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা হাতে পাইনি।
মনিরামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি ইউএনও স্যার দিয়েছেন। সচিবের কাছ থেকে কেউ টাকা কেটে রাখেনি। তাকে প্রথম কিস্তির ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। কাজ বুঝে পেলে বাকি টাকা দেওয়া হবে।
মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, পাঠাগার প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা অনিয়ম হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।