দৌলতপুরে রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অভিযান

আগের সংবাদ

পালিয়ে দেশে ফিরলেন আরাকান আর্মির হাতে আটক ২ জেলে

পরের সংবাদ

ভয়াল ২৯ এপ্রিল:

৩৪ বছরেও স্বজন হারানোর বেদনা ভুলতে পারেনি উপকূলবাসী

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৫ , ৭:৫৩ অপরাহ্ণ আপডেট: এপ্রিল ২৯, ২০২৫ , ৮:০০ অপরাহ্ণ

আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এই দিন প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল দেশের উপকূলীয় জনপদ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা। ২৫০ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড় এবং ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস আঘাত হেনেছিল উপকূলীয় জনপদে। ওই ঘটনায় দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত হয়।

১ কোটির বেশি মানুষ তাদের সহায় সম্পদ হারায়। বিরান হয়ে যায় দেশের বড় একটি অংশের জনপদ। হাজারো ঘরবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে যায়। পাল্টে যায় ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকার জীববৈচিত্র্যও। নদীর তীর, পথ-ঘাট, ঝোঁপ-ঝাড়ে পড়ে থাকে মানুষের মরদেহ। পড়ে ছিল অসংখ্য মৃত গবাদিপশু। সেই ভয়াল ঘটনা এখনও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় চট্টগ্রামের উপকূলবাসীকে। দুঃসহ সে স্মৃতি আজও কাঁদায় স্বজনহারা মানুষকে।

ওই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় ফসলের ক্ষেত, লাখ লাখ গবাদিপশু। সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ছিল দেড় বিলিয়ন ডলার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ভোলা, হাতিয়া, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, কক্সবাজারের চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায়। এই ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকা এখনও অরক্ষিত। চট্টগ্রাম নগরীর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হালিশহর, আগ্রাবাদ, কাটঘর, বন্দর, পতেঙ্গাসহ নগরীর বিশাল এলাকা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছিটকে যায় নোঙর করা বড় বড় জাহাজ।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নৌবাহিনীর জাহাজ। জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় নৌবাহিনীর অনেক অবকাঠামো। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজ। শিশু-সন্তান ও পরিবার নিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় জলোচ্ছ্বাসে আটকা পড়েন নৌ ও বিমানবাহিনীর অনেক সদস্য। ভেসে যায় অনেকের আদরের ছোট্ট শিশু।

সেদিন রাত ৮টার দিকে আবহাওয়া অফিস ঘোষণা করে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। রাত ১০টার পর ১০ থেকে ২৫ ফুট উচ্চতায় সাগরের পানি মুহূর্তেই ধেয়ে আসে লোকালয়ে। তখন ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা প্রচার বর্তমান অবস্থার মতো ছিল না। রেডিওনির্ভর ছিল বেশিরভাগ উপকূলীয় এলাকার মানুষ।

তাই অনেকে ১০ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষণা তেমন আঁচ করতে পারেননি। প্রশাসনিক সতর্কতা শিথিল থাকায় বেশিরভাগ মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়েননি। ফলে ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন উপকূলীয় বাসিন্দারা। জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ওই রাতে অনেক মা হারান সন্তানকে, স্বামী হারান স্ত্রীকে, ভাই হারান বোনকে। কোথাও কোথাও পুরো পরিবারই হারিয়ে যায় পানির স্রোতে। ২৯ এপ্রিলের ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি বয়ে উপকূলীয় মানুষের কাছে দিনটি ফিরে আসে বারবার। দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি শোকাবহ দিন।

কক্সবাজারের মোহাম্মদ হোসেনের মতো অনেকে পরিবার হারিয়ে আজও স্মৃতির ভার বহন করছেন। কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং চরপাড়ায় মোহাম্মদ হোসেন দুই ভাই-বোন ছাড়া পরিবারের বাকি সবাইকে হারান। তার মতো শত শত পরিবার হারানো স্বজনের স্মৃতি বয়ে চলেছে প্রতিদিন।

ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, ঐ সময় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি হলেও দুর্যোগ মোকাবিলায় ছিল ব্যাপক অনভিজ্ঞতা। নিরাপদ আশ্রয়ে না যাওয়ায় প্রাণহানির সংখ্যা ভয়াবহ রূপ নেয়। মা হারিয়েছে সন্তানকে, ভাই হারিয়েছে বোনকে। অনেক পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

প্রতি বছর ২৯ এপ্রিল উপকূলে আয়োজন করা হয় মিলাদ মাহফিল, কুরআনখানি ও দোয়া অনুষ্ঠান। অনেক জায়গায় ছিন্নমূলদের মাঝে খাবার বিতরণ ও স্মরণসভা হয়। তবে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনো দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়ে গেছে। কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফসহ বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক বেড়িবাঁধ এখনো ভঙ্গুর।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, বর্তমানে উপকূলে ৫০০টির বেশি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে এবং দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ায় বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হচ্ছে। তবে উপকূলবাসীর সুরক্ষার জন্য আরও টেকসই অবকাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়