প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ

আগের সংবাদ

পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক

পরের সংবাদ

ডুবে গেছে শহরের সড়ক, অলি-গলি ও দোকানপাট

চট্টগ্রামে ভারি বৃষ্টিতে ডুবছে নগরী, দুর্ভোগে মানুষ

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৪ , ৭:০৮ অপরাহ্ণ আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২৪ , ৭:০৮ অপরাহ্ণ

সপ্তাহখানেক ধরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে চট্টগ্রামে। বৃষ্টির পানিতে নগরের বেশিরভাগ এলাকার রাস্তায় পানি জমে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারীরা। এদিকে, বৃষ্টির কারণে সকাল থেকে গণপরিবহনের সংখ্যা কম। সেই সুযোগে থ্রি-হুইলার, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার চালকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের রাহাত্তারপুল, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, চকবাজার, শুলকবহর, বাদুড়তলা, মুরাদপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় সড়কে পানি জমে জনভোগান্তি তীব্র আকার ধারণ করেছে। নগরের অনেক প্রধান সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে দুর্ভোগে পড়েছেন লোকজন। আবহাওয়া অফিস বলছে, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে আরও ২৪ ঘন্টা। সেইসাথে পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধস বা পাহাড়ধসেরও শঙ্কার কথা জানিয়েছেন তারা।

এদিকে, গত শুক্রবার থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে চট্টগ্রামে। এতে নগরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ওই দিন সন্ধ্যা ও রাতের দিকে পানি নেমে গেলেও পরদিন শনিবার ভারী বর্ষণে আবারও তলিয়ে যায়। এই বৃষ্টি ঝরে রবিবারেও। তবে দ্বিতীয় দিনের তুলনায় তৃতীয় দিন জলাবদ্ধতার ব্যাপকতা কম ছিল। থেমে থেমে বৃষ্টি চলে আরও দুদিন। কিন্তু গতকালের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা আরও প্রকট হয়েছে। একইসাথে নগরের নিচু এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে যায়। আজকের বৃষ্টিতেও সৃষ্টি হয়েছে নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, আজ সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার ৯টা পর্যন্ত) বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৪২ মিলিমিটার। আগামী ২৪ ঘন্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল বারেক বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘন্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে নগরের আশপাশে ভূমিধসেরও সম্ভাবনা আছে। তবে আজকে সন্ধ্যার পরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে। মানে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সমুদ্র বন্দরে দেওয়া তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত গতকাল (বুধবার) নামিয়ে ফেলা হলেও সাগর এখনো উত্তাল রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই মুহূর্তে সাগরে ট্রলার ও মাছ ধরার নৌকাগুলোকে সাগরের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে।’

ডুবে গেছে শহরের সড়ক, অলি-গলি ও দোকানপাট

টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে নগরের চকবাজার, কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, বাদুরতলা, শান্তিনগর, ফুলতলা, বউবাজার, রাহাত্তার পুল, কালা মিয়া বাজার, তুলাতলী, রুবি গেট, মুরাদপুর, সুন্নিয়া মাদ্রাসা রোড, ডিসি রোড, বহদ্দারহাট, খাজা রোড, ফরিদারপাড়া, ঘাসিয়াপাড়া, খতিবেরহাট, বারইপাড়া, মাইজপাড়া, খরমপাড়া, বাকলিয়া, মিয়া খান নগর, কে বি আমান আলী সড়ক, সৈয়দ শাহ সড়ক, চাক্তাই, দুই নম্বর গেট, আল ফালাহ গলি, পুরোনো চান্দগাঁও থানা এলাকা, রিয়াজউদ্দিন বাজার, সাগরিকা ও আকমল আলী সড়ক। এসব এলাকার বাসাবাড়ি, মসজিদ, বিপণিবিতান, দোকানপাট ডুবে গেছে পানিতে।

অন্যদিকে, গতকালের (বুধবার) বৃষ্টিতে চকবাজারের কাঁচাবাজার এলাকার সিরাজদ্দৌলাহ সড়ক, কে বি আমান এলাকার সড়কে কোমরসমান পানি ছিল। সড়কের দু’পাশের দোকানপাটে পানি জমে রয়েছে। আজও বৃষ্টিতে একই অবস্থা এ এলাকার। জলাবদ্ধতার কারণে অধিকাংশ দোকানপাট খোলেনি। তবে কিছু দোকান খুললেও তাতে বেচাবিক্রির চেয়ে পানি পরিষ্কারের বেশি ব্যস্ত ছিলেন দোকানি ও কর্মচারীরা। এমনকি সড়কে রিকশা ছাড়া অন্য কিছু চলাচল করতে দেখা যায়নি। চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা আবু তৈয়ব বলেন, ‘চকবাজার মেডিকেল যাওয়ার কথা ছিল। বাসা থেকে বের হয়ে দেখি হাঁটু পানি। মেইন রোডে কোমরসমান পানি। কালকেও এমন ছিল।’

হোসাইন আজাদ নামের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ‘তাঁর বাসা ফুলতলা এলাকায়। গতকালের বৃষ্টিতে বাসায় পানি ঢুকেছে। পানি পরিষ্কার করতে করতে বেলা শেষ। আজকেও আবার জলাবদ্ধতার পানি ভোগাচ্ছে। জিইসি মোড়ে পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একজন ভদ্রমহিলা। আলাপকালে ভদ্রমহিলা জানান, মেয়েকে নিয়ে তিনি চকবাজার যাবেন। আধ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও রিকশা পাচ্ছেন না। বৃষ্টি ও পানির কারণে কোনো রিকশা সেদিকে যেতেই চাচ্ছে না। কেউ কেউ অতিরিক্ত ভাড়া চাইছেন। অন্যান্য সময়ে চকবাজার ৬০ টাকা হলেও আজ রিকশাচালকেরা ১২০ টাকা বা তারও বেশি নিতে চাইছেন।’ ৮০ টাকা বলার পরও কোনো রিকশা যেতে রাজি হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

আবুল নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘কালকের চেয়েও আজকের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি পানি উঠেছে। এই ময়লা পানির মধ্যে রিকশা চালাতে অনেক কষ্ট হয়। রিকশার চাকাও নষ্ট হয়ে যায়। আবার বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে রিকশা চালাতে হচ্ছে বলে শরীরও খারাপ হয়। কিন্তু দুইটা টাকা বেশি ভাড়া চাইলে রাগ করে। আমরাও তো জীবন ঝুঁকিতে নিয়ে মানুষদেরকে নিয়ে যাই। আমাদের দুঃখ কেউ বুঝে না।’

প্রসঙ্গত, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের একটি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দুটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্পের আওতায় ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার কাজ চলছে। গত ৭ বছরে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরও সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। চলতি বছরের জুনে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। সময় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়