মাগুরায় দু'গ্রুপের সংঘর্ষ পিস্তলসহ আটক ১ অর্ধ-শতাধিক বাড়ি ঘর ভাংচুর

আগের সংবাদ

আবারও এভারেস্টের চূড়ায় ব্রিটিশ বাংলাদেশি আকি রহমান

পরের সংবাদ

বাজেট ২০২৪-২৫: মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকনির্দেশনা কোথায়?

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৪ , ১১:১২ পূর্বাহ্ণ আপডেট: জুন ৮, ২০২৪ , ১১:১২ পূর্বাহ্ণ

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, স্বভাবতই তাতে লাগাতার মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, কাগজে-কলমে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোর ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। বরং অর্থমন্ত্রী আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে বাজেটে অর্থ সংগ্রহের দিকে বেশি নজর দিয়েছেন। ফলে বহু নিত্যপণ্য ও সেবার ওপর করারোপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ও উপকারভোগীর সংখ্যা নামমাত্র বাড়িয়ে আশা করা হয়েছে, এর ফলে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে। অথচ বাস্তবতা হলো, গত কয়েক বছর ধরেই মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ, খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বেশি। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত বাজেটের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্য পূরণ কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বরং করজালের সম্প্রসারণে মধ্যবিত্তের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

বস্তুত প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যবিত্তের জন্য তেমন কোনো সুখবর নেই। ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। উপরন্তু মেট্রোরেলের টিকিটের দাম নিয়ে যে প্রশ্ন ছিল, ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসিয়ে তাকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। ইন্টারনেটসেবা ও মোবাইল ফোনের কলরেটে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তও মধ্যবিত্তবান্ধব নয়। প্রকৃতপক্ষে, বাজেটে ভ্যাট ও শুল্ক-কর খাতে এমন অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার ফলে মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন ব্যয় আরও বাড়বে। প্রস্তাবিত বাজেটের যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে তা হলো, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ। বৈধ আয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ করহারের বিপরীতে অবৈধ আয়ের করহার ১৫ শতাংশ করায় দুর্নীতি উৎসাহিত হবে বলে মনে করছে মানুষ।

বাজেটে উপেক্ষিত হয়েছে রপ্তানি খাত। রপ্তানির উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ এবং নগদ প্রণোদনার ওপর উৎসে কর হ্রাসের দাবি আমলে নেওয়া হয়নি। উপরন্তু কাঁচামাল আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে, যার ফলে চাপে পড়তে পারে এ খাত। তবে সংসদ- সদস্যদের গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করার বিষয়টি যথার্থ বলে মনে করি আমরা।

৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয় প্রাক্কলনের ফলে ঘাটতিই থেকে যাচ্ছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এ বড় অঙ্কের ঘাটতি কীভাবে পূরণ হবে, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এজন্য যে সক্ষমতা প্রয়োজন, সেটা অর্জন করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। দেশে বাজেট ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল। এটি কাটিয়ে ওঠা জরুরি। বাজেটের যথার্থ বাস্তবায়নে বরাদ্দের অর্থ সঠিক সময়ে খাতগুলোতে পৌঁছাতে হবে। বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহারে প্রতিটি খাতে বাড়াতে হবে দক্ষতা ও প্রশাসনিক সক্ষমতা। রোধ করতে হবে অপচয়। সংসদে বাজেট নিয়ে অর্থবহ আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। সংসদের বাইরে বিশেষজ্ঞরাও তাদের মতামত দেবেন। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আমরা আশা করব, কর প্রস্তাবসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংসদের ভেতর ও বাইরে থেকে যেসব সুপারিশ উঠে আসবে-যৌক্তিকতা বিচার করে বাজেটে সে অনুযায়ী সংশোধন আনতে দ্বিধা করবে না সরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়