কক্সবাজারের দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত মাছের পোনা সংগ্রহের বিশাল সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। সেখানে এখনই চিংড়ি ও মাছের পোনা সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার মানুষ। যদিও এর বড় একটি অংশ হচ্ছে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের, যারা শরণার্থীশিবির থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের সৈকতসংলগ্ন পাহাড়ি এলাকাগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। অবৈধ জাল দিয়ে চিংড়ি পোনা ধরতে গিয়ে প্রতিদিন ধ্বংস করা হয় অন্যান্য মাছের দুই কোটি পোনা। বিষয়টি অবশ্যই মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার জন্য উদ্বেগের।
কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৮৪ কিলোমিটার লম্বা কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন সমুদ্রসৈকতে মূলত পোনা আহরণ করা হয়। সমুদ্রসৈকতের বালুচরে হাজারের বেশি গাছের খুঁটি পুঁতে এর সঙ্গে মশারি জাল বেঁধে রাখা হয়। জোয়ারের সময় সেই জালে ঢুকে পড়ে চিংড়ির পোনা, সঙ্গে অন্যান্য প্রজাতির মাছের পোনা ও লার্ভা। ঝাউবাগানের ভেতর অবস্থান করা পোনা আহরণকারীরা সময় হলে মশারি জালে আটকে পড়া পোনাগুলো জলভর্তি পাত্রে তুলে নিয়ে যান। শুধু চিংড়ির পোনা তুলে নিয়ে অন্যান্য মাছের পোনাগুলো বালুচরে ফেলে দেওয়া হয়, যেগুলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মারা যায়।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে মে, জুন ও জুলাই মাসে সমুদ্রের পানি মিষ্টি হয়ে আসলে উপকূলরেখার কাছে অনেক ধরনের সামুদ্রিক মাছ ডিম পাড়ে। এর বাইরে সাগরে ছাড়া ডিমগুলোও ঢেউয়ের টানে ভেসে তীরে আসে। এই ডিমগুলো লার্ভা ও পোনাতে পরিণত হওয়া পর্যন্ত মূলত ম্যানগ্রোভ বন এবং উপকূলীয় অঞ্চলের উপকূলরেখার কাছে থাকে। এ অবস্থায় চিংড়ির পোনা ধরার জন্য মশারি জাল বসিয়ে অন্যান্য চিংড়ি ও মাছের পোনার পাশাপাশি জিও প্লাংটন এবং পোস্ট লার্ভা ধ্বংস করা হচ্ছে।’
এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার ভাষ্য, চিংড়ি পোনা ধরার এই প্রক্রিয়াটি আসলে জলজ জীববৈচিত্র্যকেই বিপন্ন কর তুলেছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।