মশক নিধনে আসছে বিটিআই
গত বছর জৈব কীটনাশক বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) আমদানি নিয়ে পাওয়া গিয়েছিল জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ। টেন্ডার থেকে শুরু করে কীটনাশক সরবরাহ পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে হয়েছিল অনিয়ম-দুর্নীতি। বিটিআই আমদানিকারক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দাবি করেছিল- সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কীটনাশক আমদানি করা হয়েছে; কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বলেছিল, তাদের কাছ থেকে এ ধরনের কোনো পণ্য উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমদানি করেনি। জালিয়াতির অভিযোগ কেবল এই একটি ছিল না। জানা গিয়েছিল, বিটিআই আমদানি করা প্রতিষ্ঠান মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের রাসায়নিক আমদানির লাইসেন্স ছিল না। বিনা লাইসেন্সে তারা ডিএনসিসির উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নিয়েছিল এবং বিটিআই আমদানির জন্য সেরা দরদাতাও নির্বাচিত হয়েছিল।
এবারো ভরা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই মশা নিধনে কার্যকরী জৈব কীটনাশক বিটিআই আনছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ বছর সিঙ্গাপুর থেকে তরল, ট্যাবলেট ও পাউডার- এ তিনটি ফর্মে ২০ কোটি টাকার বিটিআই আসছে। বিটিআইয়ের বদলে নতুন ফরম্যাটে ‘বিটিএস’ নামে আসছে এ কীটনাশকটি। পাশাপাশি ওষুধ ছিটানোর জন্য অত্যাধুনিক ‘হুইলবারো’ মেশিনও আনার প্রক্রিয়া চলছে। ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গত বছরের সনদ ও পণ্য জালিয়াতির পর এবার ডিএনসিসি নিজেরাই সরাসরি সিঙ্গাপুর থেকে এ জৈব কীটনাশক আনছে। এজন্য উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং থেকে ৪ প্রকারের বিটিআই আমদানির সনদও নেয়া হয়েছে।
বিটিআই আমদানির বিষয়ে সিঙ্গাপুরের ‘বেস্ট কেমিক্যাল’ কোম্পানির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে ডিএনসিসি। উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং থেকে জৈব কীটনাশক বিটিআই আমদানি করতে এরই মধ্যে রেজিস্ট্রেশনও সম্পূর্ণ হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বিটিআই হচ্ছে বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্টের মধ্যে উত্তম প্রস্তাব। এটি নিয়ে আমরা অলরেডি কাজ করেছি। সিঙ্গাপুর থেকে নতুন করে বিটিআই আনার জোর প্রক্রিয়া চলছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষা ছিল। মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে; এখন শিগগিরই এয়ারে করে বিটিআই নিয়ে আসব। মেয়র বলেন, আগেরবার বিটিআই কিনতে গিয়ে আমাদের শিক্ষা হয়েছে। এবার বিটিআই কোনো ঠিকাদারের মাধ্যমে আনা হবে না।
বিটিআই যারা উৎপাদন করে, তাদের কাছ থেকেই সরাসরি আনা হবে। ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিটিআই হাতে এলে তা তাৎক্ষণিক প্রয়োগ না করে অল্প কিছুদিন সময় হাতে নিয়ে এটি প্রয়োগের কলাকৌশল ও কার্যকারিতা আগে পরীক্ষা করা হবে। কর্মকর্তারা বিশেষজ্ঞ টিমের কাছ থেকে জানবেন, বিটিআই কীটনাশকটি কীভাবে মিক্সিং হবে, কীভাবে ও কোথায় ব্যবহার হবে।
এরপর ডিএনসিসির এলাকায় বিটিআই প্রয়োগ করা হবে। বিটিআই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। যা মাটিতে পাওয়া যায়। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, বিটিআই প্রাকৃতিক, সাশ্রয়ী ও টেকসই। এটি মূলত পেটের বিষক্রিয়াসহ মাইক্রোবায়াল উৎসর একটি নিম্ন-বিষাক্ত কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ব্যাকটেরিয়াটি বড় টক্সিন তৈরি করতে পারে, যা কীটপতঙ্গের খাওয়া বন্ধ করে দেয়। ডেঙ্গু রোগ ও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি মাঠপর্যায়ে জৈব কীটনাশক বিটিআই ছিটানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে তা যেন অতীতের মতো প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেদিকে কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। নগরবাসীর সঙ্গে যেন মশা নিধনের নামে আর কোনো প্রহসন না হয় সেটাই সর্বশেষ প্রত্যাশা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।