গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ "প্রতিবাদে বনানীতে সড়ক অবরোধ

আগের সংবাদ

কুবিতে অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

পরের সংবাদ

বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে তুলেছেন কুবির উপাচার্য!

প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৪ , ৫:০৮ অপরাহ্ণ আপডেট: মে ৪, ২০২৪ , ৫:০৮ অপরাহ্ণ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের যোগদানের পর থেকেই অস্থিতিশীলতা শুরু
হয় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। উপাচার্য মদদপুষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হরহামেশাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে শুরু করে
শিক্ষকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি উপাচার্য। উলটো সময়ে সময়ে ভিন্ন মতের
শিক্ষকদের হেনস্তা করেছেন তিনি নিজেই। ফলে উপাচার্যের নেতৃত্বে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচারহীনতার
সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন ভ‚মিদস্যু, হত্যা ও ধর্ষণ মামলার আসামি, বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে বহিষ্কৃত, শিক্ষকদের মারধরকারী এবং বিভিন্ন অপকর্মে যুক্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিজের বলয় তৈরি
করেছেন। তারা ক্যাম্পাসে উপাচার্যের প্রটোকল বাহিনী ও চাকরিপ্রার্থী হিসেবে নামে পরিচিত। ‘প্রটোকল
বাহিনী’র সদস্যরা হলেন, রেজা-ই-এলাহি, রকিবুল হাসান রকি, অনুপম দাস বাঁধন, বিপ্লব চন্দ্র দাস, আমিনুর
রহমান বিশ্বাস, মাসুদ আলম, আরিফুল ইসলাম বাপ্পী, ফয়সাল হোসেন, ইকবাল হোসাইন খান, মেহেদী হৃদয়, পার্থ
সরকার, ইমরান হোসাইন, মুশফিকুর রহমান খান তানিম, এম নুর উদ্দিন হোসাইন, ইমাম হোসেন, সাব্বির, রাকিব
হোসাইন, দ্বীপ চৌধুরী, মাসুম, আরমান হোসেন, ইমরুল কায়েস আবিরসহ অন্যান্যরা। এসব হামলাকারীদের
সাথে বিভিন্ন সময় মিটিং করতে দেখা যায় সহকারী প্রক্টর আবু ওবায়দা রাহিদকে। বিভিন্ন সময় এদের নিয়ে
ক্যাম্পাসে ঘুরেন তিনি।

গত ২৮ এপ্রিল তাদের নিয়ে শিক্ষকদের মারধর করেন উপাচার্য, প্রক্টর ও কোষাধ্যক্ষ। এসময় উপাচার্য মঈন প্রতœতত্ত¡
বিভাগের শিক্ষক মোর্শেদ রায়হানকে কনুই মারেন। প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বাংলা বিভাগের শিক্ষক মোকাদ্দেস-উল-
ইসলামকে গালে ঘুষি মারেন। সাবেক শিক্ষার্থী আমিনুর বিশ্বাস ও হত্যা মামলার আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাস
ধাক্বা দিয়ে ফেলে দেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীমুল ইসলামকে। এ এ ঘটনায় ২০ জনের নামে থানায়
অভিযোগ দায়ের করেন শিক্ষক সমিতি।

এর আগে গত ১৯ ফেব্রæয়ারি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে জয়ী কমিটি উপাচার্যের কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে
গেলে শিক্ষকদের ‘থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেওয়া’র হুমকি দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের
সভাপতি ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন। এসময় উপাচার্যপন্থি কয়েকজন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও
সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি অংশের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের লাঞ্ছনা করার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় থানায় জিডি ও
বিচারের দাবিতে রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি উপাচার্য। এছাড়া অ্যাকাডেমিক
সভায় জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে মারধর করে চশমা ভেঙ্গে ফেলা, সহকর্মীকে বিভাগের সভায় ‘কুত্তা’ বলে গালি দেয়া ও একই
শিক্ষকের বিরুদ্ধে জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ থাকলেও এসব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও
শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে তার কোনোটিরই বিচার হয়নি।

অথচ ২০২৩ সালে উপাচার্যপন্থি সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তের সাথে ছাত্রলীগের দুই নেতার বাকবিতÐা হলে ঐ দুই
নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বহিষ্কারের পরপরই উপাচার্য মদদপুষ্ট সাবেক
শিক্ষার্থীদের মারধরের শিকার হোন দুই শিক্ষার্থী। তবে তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। উলটো
বিষয়টি নিয়ে হাসতে দেখা যায় প্রক্টরকে। তবে মারধরকারী ঐ সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়েই বিভিন্ন অনুষ্ঠান
উদযাপন করেন উপাচার্য। এছাড়াও দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তুলেন প্রতিবেদন
জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি। পরে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসন হুট করেই বহিষ্কার করে
প্রশাসন। পরে হাইকোর্টে আপিল করলে হাইকোর্ট সেই বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করা হয়। তবে ক্যাম্পাসে
‘প্রটোকল বাহিনীর’ একটি অংশ অস্ত্রসহ বাইক শোডাউন, ফাঁকাগুলির মতো ঘটনা ঘটালেও সে বিষয়েও কোনো
ব্যবস্থা নেননি তিনি। উলটো আবাসিক হল সিলগালা করেন তিনি।

এছাড়াও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অ্যাকাডেমিক সভায় সিনিয়র শিক্ষককে থাপ্পড় মেরে চোখের
চশমা ভেঙে ফেলেন জুনিয়র শিক্ষক। এ ঘটনার কোনো বিচার করেননি। তবে স¤প্রতি ঐ জুনিয়র শিক্ষকই
উপাচার্যের অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছেন। এছাড়াও ক্রীড়া কমিটির এক মিটিংয়ে নৃবিজ্ঞান
বিভাগের এক শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক
কাজী এম. আনিছুল ইসলাম। সেই ঘটনায় পর কয়েকদিন পরেই উপাচার্য মঈন সাংবাদিকতা বিভাগের ঐ শিক্ষকের
সাথে ফেসবুকে ছবি আপলোড করতে দেখা যায়। এছাড়াও ঐ শিক্ষক সহকর্মীদের কুত্তা, কুকুরের পৌত্র,
প্রতœতাত্তি¡ক বান্দর বলে গালি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে এসব বিষয়ের কোনোটিই আমলে নেননি উপাচার্য
মঈন। এরপর সহকারী প্রক্টর আবু ওবায়দা রাহিদ কাজী আনিছের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছে এমন অভিযোগ এনে
সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন কাজী আনিছ। এঘটনারও কোনো বিচার হয়নি। এছাড়াও পক্ষ-বিপক্ষে বুঝে
বিভিন্ন মামলার অভিযুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পারিবারিক মামলায় চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতিও
দিয়েছেন তিনি।

২০২৩ সালের (২ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষে পক্ষপাতিত্বমূলক
সিদ্ধান্তের অভিযোগ এনে মাঠ রেফারিকে ¯েøজিং করতে থাকলে এতে বাঁধা দেন সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত। এসময়
উপাচার্যের সামনেই শিক্ষার্থীদের মারধর করেন প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ
থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

এবিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, উপাচার্য এখানে আসার পর থেকে যতগুলো
অপকর্ম ঘটেছে সবগুলোই উপাচার্যের মদদে ঘটেছে। এছাড়া উপাচার্যের তৈরি পেটুয়া বাহিনীর দ্বারা শিক্ষকদের
ওপর হামলা হলো এবং উপাচার্য নিজেই হামলায় অংশ নিলেন৷ আসলে এখানে ওনি কার বিচার করবেন! এইসব
অপকর্মগুলো করাই হয় উপাচার্যের মদদে। একারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতি হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়