শারজাহ থেকে করাচি, কলম্বো থেকে মিরপুর—চার দশকের চেষ্টার পর অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত এসে গেছে। আজ রোববার দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্রিকেট দুনিয়ার বহুল প্রতীক্ষিত মেগা ফাইনাল। একে অপরের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান আজ প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে।

এই ফাইনাল ঘিরে শুধু মাঠ নয়, আলোচনার ঝড় বইছে টকশো থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যন্ত। কে জিতবে—এ নিয়েই চলছে জল্পনা-কল্পনা। এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও দিয়েছে ভবিষ্যদ্বাণী। গুগল জেমিনি বলেছে, ম্যাচের ফল অনুমান করা কঠিন, তবে সম্ভাব্য বিজয়ী ভারত। অন্যদিকে চ্যাটজিপিটি বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, ব্যাটিং গভীরতা, বোলিং বৈচিত্র্য এবং সামগ্রিক ভারসাম্যে ভারত এগিয়ে আছে। তাদের মতে, ভারতের জয়ের সম্ভাবনা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ, আর পাকিস্তানের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। যদিও ফাইনালের মতো চাপের ম্যাচে এক-দুটি টার্নিং ওভারই পুরো ফলাফল বদলে দিতে পারে।

দুবাইয়ের উইকেট রান তাড়ায় সহায়ক। তাই পাওয়ার প্লেতে যদি আশির বেশি রান ওঠে, তবে ১৭০-এর মতো টার্গেটও দেওয়া হতে পারে। এআই-এর বিশ্লেষণ বলছে, ভারত ১৮-১৯ ওভারের মধ্যেই ৬-৭ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম। তবে এমন আবেগময় ম্যাচে শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে সব বোঝা যায় না।

৪১ বছরের টুর্নামেন্ট ইতিহাসে এবারই প্রথমবার ভারত-পাকিস্তান ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে। এর আগে আয়োজকদের বহু চেষ্টা সত্ত্বেও আজহারউদ্দিন-আমির সোহেল কিংবা শচীন-আকরামদের নিয়ে স্বপ্নের ফাইনাল কখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এশিয়া কাপে ভারত ১৬ আসরের মধ্যে ৮ বার শিরোপা জিতেছে, পাকিস্তান জিতেছে মাত্র ২ বার। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও ভারত অনেক এগিয়ে। সাম্প্রতিক এক বছরে ভারতের জয়ের হার ৮৮ শতাংশের বেশি, পাকিস্তানের সেখানে মাত্র ৫১ শতাংশ। তবে অতীতের ১০টি ভারত-পাকিস্তান ফাইনালের মধ্যে পাকিস্তানই জয় পেয়েছে ৭ বার। তাই ইতিহাস কিন্তু এখনো পাকিস্তানের দিকেই ঝুঁকে আছে।

ফাইনালে ওঠার পর পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগার আত্মবিশ্বাসী ঘোষণা, “আমরা জানি ফাইনালে কী করতে হবে। আমরা যে কোনো দলকে হারানোর মতো যথেষ্ট শক্তিশালী।” শাহিন শাহ আফ্রিদিও জানিয়েছেন, তারা প্রস্তুত। অন্যদিকে ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার প্রতিপক্ষের নাম মুখে না এনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতা ম্যাচকে সেমিফাইনালের মতো খেলতে বলেছিলেন সতীর্থদের। এখন ফাইনালে একই মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামতে চান তিনি।

ভারতের ব্যাটিং অর্ডার এবার কিছুটা অনিশ্চিত। শুভমান গিল ফর্মহীন, মিডল অর্ডারে কেবল তিলক ভার্মা কার্যকর, আর লোয়ার অর্ডারে ভরসা হার্দিক পান্ডিয়া। তবে স্পিনার কুলদীপ-বরুণ এবং অভিষেকের ব্যাটিং দারুণ ফর্মে আছে। অন্যদিকে পাকিস্তান ওপেনার সাইম আইয়ুব একের পর এক ব্যর্থ হলেও সাহিবজাদা ফারহান ও লোয়ার অর্ডারে ফাহিম আশরাফ ও শাহিনের ছক্কা দলকে আস্থা দিয়েছে।

আজকের ফাইনালে তাই সব পরিসংখ্যান এক পাশে রেখে ক্রিকেট দুনিয়ার দৃষ্টি থাকবে দুবাইয়ে। ইতিহাস বলছে পাকিস্তান এগিয়ে, কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্মে ভারত অপরাজেয়। ফলাফল কী হবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আজ রাত পর্যন্ত।