বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)-র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের পাশাপাশি দেশের ১০টি বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মোট ৫৭,২৫৭ কোটি টাকা জব্দের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিদেশে পাঠানো অর্থ রয়েছে ১০,৪৫২ কোটি টাকা, এবং দেশে থাকা জব্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৪৬,৮০৫ কোটি টাকা।
অন্তর্বর্তী সরকার এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও জালিয়াতি তদন্তের জন্য ১১টি যৌথ সরকারি তদন্ত দল গঠিত করেছে; ওই দলগুলোর কাজ-কর্ম সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে বিএফআইইউ। যৌথ দলের সদস্যরা দুদক, সিআইডি ও এনবিআর। তদন্তে নাম আছে শেখ হাসিনা ও পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি এস আলম গ্রুপ, আরামিট গ্রুপ (সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ পরিবারের), নাবিল গ্রুপ, বেক্সিমকো, নাসা, সিকদার, বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন ও জেমকন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের। কয়েকটি বিদেশি সংস্থাও বাংলাদেশকে তদন্তে সহায়তা করছে।
বিএফআইইউ বলছে, এখনও পর্যন্ত তদন্তের প্রেক্ষিতে ১,৫৭৩টি ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে ১,৬৮০ কোটি টাকা ও ৩০ লাখ ডলার জব্দ করা হয়েছে এবং ১৮৮টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের বিপরীতে ১৫,৫০০ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। এসব অর্থ অস্থায়ীভাবে জব্দ করা হয়; পরে তদন্তকারী সংস্থাগুলো আদালতের মাধ্যমে আরবিবদ্ধ (অবরুদ্ধ) করার অনুরোধ করতে পারে।
রিপোর্টে মোট জব্দ করা সম্পদের মধ্যে স্থাবর সম্পত্তি ~১৩,৮৭২ কোটি টাকা (বিদেশে ~৬,০৯৭ কোটি, দেশে ~৭,৭৭৫ কোটি) এবং অস্থাবর সম্পত্তি ~৪৩,৩৮৫ কোটি টাকা (দেশে ~৩৯,০৩১ কোটি; বিদেশে ~৪,৩৫৪ কোটি) হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিদেশে জব্দ হওয়া অর্থের মধ্যে রয়েছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবারের ১৫ কোটি পাউন্ড এবং বেক্সিমকো গ্রুপের সংশ্লিষ্টদের ৯ কোটি পাউন্ড, যা যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি জব্দ করেছে।
বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেন, অর্থপাচারের বিস্তার আগে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের কারণগুলোর মধ্যে একটি। গত কয়েক বছরে রিজার্ভের ওঠা-নামার ধারাও দেখা গেছে; তবে সম্প্রতি তদন্ত-নীর্তন ও জব্দ কার্যক্রমের প্রভাবে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ার সঙ্গে গ্রস রিজার্ভ পুনরুদ্ধার হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও বলেছেন—অর্থ উদ্ধারে সময় লাগবে, তবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় পাচার অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।