প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে দিয়ে সাময়িক সমাধান দিতে চায় না আপিল বিভাগ। বরং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এমন একটি কার্যকর ও স্থায়ী সমাধান খোঁজা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আর কোনো সংকট বা বিঘ্ন সৃষ্টি না করে এবং দেশের গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করে তুলবে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদনের শুনানিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়।
আবেদনের পক্ষে আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করছেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। এর আগের দিন মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) একই বিষয়ে চারটি আবেদনের ওপর প্রথম দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদে গৃহীত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়। ১৯৯৮ সালে আইনজীবী এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট এই রিট খারিজ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বৈধ ঘোষণা দেয়।
পরে মামলাটি আপিল বিভাগে গড়ায়। ২০০৫ সালে আপিলের প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বাতিল ঘোষণা করে। ওই রায়ের ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন, যার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়। একই বছরের ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়।
তবে এই রায় নিয়ে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে আসছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর নাগরিক সংগঠন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি আবেদন করেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভুঁইয়া ও জাহরা রহমান।
এছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বছরের ১৬ অক্টোবর এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ২৩ অক্টোবর পৃথক আবেদন করেন। অন্যদিকে নওগাঁর রানীনগরের মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও একই বিষয়ে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান।
সবগুলো আবেদনের প্রেক্ষাপটেই আপিল বিভাগ এখন পূর্ণাঙ্গ শুনানি চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার বিষয়ে একটি সুদূরপ্রসারী ও স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা যায়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।