চট্টগ্রামে ৬৫ ভরি স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনায় যুবদল নেতা বহিষ্কার

আগের সংবাদ

পাইকগাছায় আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস পালিত

পরের সংবাদ

পূর্বাঞ্চলের রেলের জমি নিয়ে চলছে দখল-বেদখল খেলা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪ , ৬:৩৬ অপরাহ্ণ আপডেট: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪ , ৬:৫৯ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিপুল পরিমাণ জমি বেদখল হয়ে রয়েছে। বেদখলদার থেকে ওই জমি উদ্ধার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে দখল-বেদখল খেলা। মূলত রেলওয়ের বেদখল হয়ে যাওয়া ভূসম্পত্তি উদ্ধার ও রক্ষণাবেক্ষণে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় না। আবার বিভিন্ন সময় ঢাকঢোল পিটিয়ে কিছু বেদখল হয়ে যাওয়া ভূসম্পত্তি উদ্ধার করা হলেও তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় না। ফলে ওসব জায়গা ফের বেদখল হয়ে যায়। এ নিয়ে রেলওয়ের এক বিভাগ আরেক বিভাগের ওপর দায় চাপিয়ে থাকে। কোনো জায়গা উদ্ধারের পরপরই ফের ওই জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে। আর লোকবল সংকট, উদ্ধার অভিযান পরিচালনায় পর্যাপ্ত বাজেট না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে ভূসম্পত্তি রক্ষা করা যাচ্ছে না রেলওয়ে থেকে বরাবর বলা হচ্ছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ নিয়ে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। সম্প্রতি এ অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় হাজারো অবৈধ স্থাপনা। উচ্ছেদ করা হয় অন্তত সাড়ে ৭ হাজার অবৈধ দখলদারকে। দখলমুক্ত করা হয় ১০ একর জায়গা। কিন্তু দখলমুক্ত করার পর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওসব জায়গা ধরে রাখা যাচ্ছে না। বরং ফের বেদখল হয়ে গেছে বেশির ভাগ জায়গা।

সূত্র জানায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে মোট জমির পরিমাণ ২১ হাজার ৫০ একর। এর মধ্যে বেদখল রয়েছে ৪৮২ একর জমি। তবে বেদখল হয়ে যাওয়া ভূসম্পত্তি উদ্ধারে গত অর্থবছরে বাজেট পাওয়া গেছে মাত্র ১০ লাখ টাকা। বেদখল হয়ে যাওয়া জায়গায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, ক্লাব, সামাজিক সংগঠন, ধর্মীয় স্থাপনা, দোকানপাট ও বসতঘর গড়ে তোলা হয়েছে।

অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী, রেলের পূর্বাঞ্চলের ভূসম্পত্তি বিভাগে ১৫৫ লোকবল থাকার কথা; রয়েছেন মাত্র ৫১ জন। বেদখলদাররা চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের নিচে রেললাইন ঘেঁষে গড়ে তুলেছে পুরোনো টায়ারের গুদাম। ২০২৩ সালের এপ্রিলে উন্মুক্ত ওই গুদামে হঠাৎ অগ্নিকা- ঘটে। তাতে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এরপর রেলওয়ে জায়গাটির দখল নেয়। তবে এর কিছুদিন যেতে না যেতেই সেখানে আগের মতোই গড়ে তোলা হয়েছে পুরোনো টায়ারের গুদাম। দেওয়ানহাটের অদূরে রয়েছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন। ওই স্টেশন থেকে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটের ট্রেন চলাচল করে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম রেললাইনের গা-ঘেঁষেই পুরোনো টায়ারের গুদামটি ফের গড়ে তোলা হয়েছে। এতে রেলের জায়গা বেদখলের পাশাপাশি রেললাইনটি দিয়ে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, চট্টগ্রাম নগরের প্রাণকেন্দ্র আগ্রাবাদে রয়েছে রেলের আগ্রাবাদ ডেবা। এখন পাড়সহ ২৭ একরের বেশি আয়তনের ডেবাটির চারপাশ বেদখল হয়ে গেছে। ভরাট করে ফেলা হচ্ছে জলাশয়ও। অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে কাঁচা- পাকা শত শত ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। দু-একবার অভিযান চালিয়ে কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও ওই জায়গায় নতুন করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা।

ময়লা-আবর্জনায় ডেবাটির পানি অনেক আগেই দূষিত হয়ে গেছে। একশ্রেণির প্রভাবশালী লোক এখানে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে নির্বিঘেœ বাণিজ্য করছেন। দেওয়ানহাট ব্রিজ এলাকার গুদাম এবং আগ্রাবাদ ডেবার মতোই চট্টগ্রামসহ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা ভূসম্পত্তি সংরক্ষণের অভাবে বেহাত হয়ে যাচ্ছে। রেলের বেদখল ভূমি উদ্ধারের দায়িত্ব হচ্ছে রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের। আর ভূমি উদ্ধার করার পর তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের। এজন্য ভূসম্পত্তি বিভাগ থেকে উদ্ধার করা জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সংরক্ষণের জন্য চিঠি দেয়া হয় প্রকৌশল বিভাগকে। আবার সেই ভূমি দেখভাল করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে (আরএনবি)। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর অবহেলা ও গাফিলতির কারণে উদ্ধার করা জায়গা ধরে রাখা যাচ্ছে না। এক বিভাগ আরেক বিভাগের ওপর দায় চাপিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করে।

এদিকে এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী জানান, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু রেলভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ওসব ভূমি ফের বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েও খুব বেশি ফল পাওয়া যাচ্ছে না। রেলের ভূসম্পত্তি দখলের নেপথ্যে সাধারণত রাঘববোয়ালরা জড়িত থাকে। অনেকে নানা অজুহাতে আদালতে মামলা করে সম্পত্তি ভোগদখল করতে থাকে।

অন্যদিকে এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা জানান, উচ্ছেদ অভিযানে উদ্ধার হওয়া জায়গায় রেলবিটের খুঁটি ও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এর পরও অনেক সময় ওই জায়গা বেহাত হয়ে যায়। আবার চাইলেই প্রতিটি জায়গায় সব সময় লোকবল দিয়ে পাহারা দেয়া সম্ভব না। তাছাড়া ভূসম্পত্তি সংরক্ষণে বাজেটেরও সংকট রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়