অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের কাছে ফেরত চাওয়া হতে পারে। যেহেতু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। তাই তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে ফেরত চাওয়া হতে পারে। শনিবার (৩১ আগস্ট) বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ কথা জানান তিনি।
তৌহিদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। এ নিয়ে উত্তর দেয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি আমি নই। (কিন্তু) যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় থেকে হাসিনাকে ফেরত চাইতে অনুরোধ আসে, তাহলে আমাদের ভারতের কাছে হাসিনাকে ফেরত চাইতে হবে। হাসিনাকে ফেরত চাইলে ভারত বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বে। এটি তারা জানে। এরফলে সেভাবেই তাদের কাজ করতে হবে। আমি মনে করি ভারত সরকার এ সম্পর্কে জানে এবং আমি নিশ্চিত এ বিষয়টি তারা বিবেচনায় রাখবে।
এছাড়া নিজ স্বার্থ বজায় রেখে বাংলাদেশ পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে চায় বলে জানিয়েছেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের নীতি হলো জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে সব দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা। কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়, আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। লক্ষ্য হলো- একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়া। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তোপের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। ওইদিনই ভারতের দিল্লিতে আশ্রয় নেন হাসিনা। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের মামলা’য় অভিযুক্ত বা ফেরার আসামি ও বন্দিদের একে অপরের কাছে হস্তান্তরের জন্য একটি চুক্তি আছে সেই ২০১৩ সাল থেকেই। কিন্তু বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নিজ দেশে একের পর এক মামলা হলেও এই চুক্তির আওতায় তাকে ফেরানো যাবে–সেই সম্ভাবনা কার্যত নেই বলেই মনে করছেন দিল্লির পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সত্যিই যদি এ ধরনের কোনো অনুরোধ আসে, সে ক্ষেত্রে ভারত সরকারের অবস্থান কী হবে সে বিষয়টি নিয়েও দিল্লি আপাতত মুখ খুলতে চাইছে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলছেন, ‘যদি প্রত্যর্পণের কথা বলেন, তাহলে সেটা তো পুরোপুরি কাল্পনিক (হাইপোথেটিক্যাল) একটা প্রশ্ন। এ রকম পরিস্থিতিতে কাল্পনিক কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়াটা আমাদের রেওয়াজ নয়!’ আপাতত নির্দিষ্ট জবাব এড়িয়ে গেলেও ঢাকার কাছ থেকে এই ধরনের অনুরোধ যে আগামী দিনে আসতে পারে, সেই সম্ভাবনা কিন্তু দিল্লি নাকচ করছে না। পাশাপাশি বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ মহল থেকেও আভাস পাওয়া যাচ্ছে, এই সম্ভাবনাটা হয়তো খুব বেশি দিন আর ‘কাল্পনিক’ থাকবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।