পাইকগাছায় অবশেষে স্বেচ্ছাশ্রমে ভদ্রা নদীর বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন

আগের সংবাদ

কনটেইনার জটের কারণে সংকটে আমদানি-রপ্তানি

পরের সংবাদ

চট্টগ্রাম চেম্বারে পরিবারতন্ত্রের আঁধার অধ্যায়ের অবসান চান ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৪ , ৮:০৯ অপরাহ্ণ আপডেট: আগস্ট ২৭, ২০২৪ , ৮:০৯ অপরাহ্ণ

ব্যবসায়ীদের শতবর্ষী সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজে ‘কালো যুগ’ চলছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিষয়টি আবারও নতুন করে সামনে এসেছে। সেই আঁধার অধ্যায়ের অবসান চেয়ে মাঠে নেমেছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। ‘পরিবারতন্ত্র-স্বৈরশাসনমুক্ত’ চেম্বার গড়ার দাবি তুলেছেন তারা।

তবে সবার অভিযোগের তীর চেম্বারের সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট এম এ লতিফ ও মাহবুবুল আলমের দিকে। মাহবুবুল বর্তমানে এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আছেন।
লতিফের হাতের মুঠোয় পুরো  চেম্বারকে ‘ওপেন সিক্রেট’ স্বর্গরাজ্য বানিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। বিনাভোটের আয়োজন, পরিবারতন্ত্র কায়েম, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার কব্জা, পুরনো চেম্বার ভবন ‘দখল’ করে ‘ভাতের হোটেল’ পরিচালনা সবই করেছেন তিনি বন্দর নগরের ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে। এমনকি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করতেন চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে!

জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম চেম্বারসহ সব ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে দলীয় নেতা বা ব্যবসায়ীদের রাখার অদাপ্তরিক নির্দেশনা আসে। এরপরও জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে চেম্বারের দায়িত্ব নেন মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম। কিন্তু তিনি লতিফের ম্যাকানিজমে যুক্ত না হওয়ায় ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে চেম্বারের দায়িত্ব নেন মাহবুবুল আলম।

এরপর টানা পাঁচবার তাকেই প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রেখে লতিফ চেম্বারের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ নেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের। তার অনুগ্রহ ছাড়া ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অফিস ভাড়া নিতে পারতো না কোনো প্রতিষ্ঠান। তাই নিউইয়র্কের শৃংখল (চেইন) মেনে গড়ে তোলা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ২০১২ সাল থেকে এক যুগ পার করেও লাভের মুখ দেখেনি এই ‘শ্বেতহস্তি’।

অভিযোগ রয়েছে, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নিচতলা রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করতেন এম এ লতিফ। তিনি বিনা ভাড়ায় ভবনটির একটি ফ্লোর ব্যবহার করতেন। পাশাপাশি চেম্বারের পুরনো ভবনকে কোনো সংস্কার না করে পরিত্যক্ত করে ফেলে রেখে সেখানে লতিফ পরিচালনা করতেন তার সেবামূলক ভাতের হোটেল। এমনকি দা-ই-ইলালা ট্রাস্ট নামে তার প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত প্রকৌশলী সোহেল অফিস করতেন চেম্বার অফিসে। বেতনও নিতেন চেম্বার থেকে।

ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী চট্টগ্রাম চেম্বারের দীর্ঘদিনের এসব অনিয়মের পর ‘স্বৈরশাসন ও পরিবারতন্ত্র’ থেকে মুক্ত করার দাবিতে গত ১৮ আগস্ট বিক্ষোভ সমাবেশ করেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। নগরের আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনে ‘চট্টগ্রামের সকল ব্যবসায়ী সমাজ’ ব্যানারে ওই সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন বঞ্চিত ব্যবসায়ীরা। তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন চেম্বারের পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীরও। সমাবেশে তিনি চেম্বারকে সংস্কারের দাবিও জানান।

তবে চেম্বারের কেমন সংস্কার চান-এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি জহিরুল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর এতোদিন এম এ লতিফের পরিবারতন্ত্রকে সমর্থন দিয়েছেন। বিনাভোটে পরিচালকও হয়েছেন। উনি যদি সত্যিকারভাবে সংস্কার চাইতেন তাহলে কথাগুলো তিনি বোর্ডে বলতে পারতেন। এখানে প্রতিবাদ জানাতে এসেছেন। কিন্তু এখনও পদত্যাগ করেননি। লতিফের ঘনিষ্ট লোক হওয়ার পরও আজকে লতিফের দুঃসময়ে তিনি ভোল পাল্টে ফেলেছেন।’

ভুয়া ভোটার বানিয়ে পকেট কমিটি

চট্টগ্রাম চেম্বারের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ৩০ মার্চ। ওই নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য এম এ লতিফ সমর্থিত মাহবুবুল আলম-নুরুন নেওয়াজ সেলিম পরিষদ জয়লাভ করে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল মোরশেদ-সালাম ঐক্য পরিষদ। এরপরের চার মেয়াদের নির্বাচনে মাহবুবুল আলমের প্রতিপক্ষ হিসেবে কোনো প্যানেল বা প্রার্থী ছিল না।
জানা গেছে, ২০০৮-১০ মেয়াদে এম এ লতিফ প্রথম চেম্বারের সভাপতি হন। এরপর পর্যায়ক্রমে চেম্বারের ৬ হাজার ৬২৩ জন সদস্যের মধ্যে প্রায় দুই হাজার ‘ভুয়া’ সদস্য তৈরি করে লতিফ-মাহবুবুল সিন্ডিকেট। এসব ভুয়া ভোটার দিয়ে সহজেই কব্জায় নেন শতবর্ষী এই ব্যবসায়ী সংগঠন। ওই কৌশলেই গত ১৬ বছর ধরে লতিফের প্যানেলই চেম্বারের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে বলে জানান চেম্বারের সদস্যরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চেম্বারের একাধিক সদস্য বলেন, ২০০৪ সালে সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ দায়িত্ব নেওয়ার পরও চেম্বারের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন তৎকালীন চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট এম এ লতিফ। ওই সময় তিনি ভুয়া ভোটার তৈরি করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি প্রেসিডেন্ট হন। পরে তিনি (লতিফ) এমপি হওয়ার পর মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমকে প্রেসিডেন্ট করা হয়। এরপর তার (এম এ লতিফ) ম্যাকানিজমে ২০১৩ সালে চেম্বার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন মাহবুবুল আলম। এম এ লতিফ ও মাহবুবুল আলমের সিন্ডিকেট ভুয়া ভোটার তৈরি করে পকেট কমিটি গঠন করে আসছে। এজন্য তারা হাইকোর্ট থেকে তিনবারের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকার বন্দোবস্তও করেন। এমনকি যারা এই সিন্ডেকেটের অনুগত হয়ে পরিচালনা পরিষদে এসেছেন, তাদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স ও টিন বানিয়ে ভোটারও বানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক চেম্বার প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, ‘তারা চাইলে মতামত দিতেই পারে। তবে আমরা বিজনেসম্যান (ব্যবসায়ী)। আমরা এসব বিতর্কে জড়াতে চাই না। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম চেম্বারের স্বৈরতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্র নিয়ে সংস্কার করতে গিয়ে শুনেছি, গত ১১ বছর ধরে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী খুঁজে পাননি। ওই সময় তারা পকেট কমিটি ঠিকঠাক করেই চেম্বার থেকে সার্কুলার দিয়ে নির্বাচনের ডাক দিতো। পরে যারা তাদের আজ্ঞাবহ না, তাদের কাগজপত্রে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে তাদের বাদ দিয়ে কমিটি ঘোষণা করতো। তারা যা মন চায় তা করেই চেম্বারের সুনাম নষ্ট করেছে।’

এ প্রসঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের চেম্বারের পরিবেশ সুস্থ করার জন্য চেম্বারের ভোটার লিস্ট ঠিক করতে হবে। এসব যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একজনকে প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়ে কিছু ব্যবসায়ীকে রেখে একটি বোর্ড করা যেতে পারে। তারা ব্যবসায়ীদের টিন ও রিটার্ন চেক করে ভোটার লিস্ট ঠিক করতে পারবেন। যাচাইকৃত ভোটারদের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটিকে দায়িত্ব দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এম এ লতিফের ম্যাকানিজমের কারণে চেম্বারের ভোট বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় অর্ধেক ভুয়া ভোটার লতিফের প্যানেলের নিয়ন্ত্রণে থাকায় নির্বাচনে তিনি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ান। যে কারণে তার প্যানেলের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাহস করে না। লতিফের এই ম্যাকানিজমের কারণে গত ১১ বছর ধরে চেম্বারে কোনো ভোট হয়নি। তাই এখন বাচ্চাদের দিয়ে কমিটি বানিয়ে চেম্বার পরিচালনা করছেন লতিফ।’
মাহবুবুলকে রাখতে আইন পরিবর্তন!

চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট পদে মাহবুবুল আলম দায়িত্ব নেন ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল। এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বিনা ভোটের নির্বাচনে ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তিনি আগের পদ ছাড়েন দীর্ঘ ১০ বছর পর। চেম্বার পরিচালনা পরিষদে একজন ব্যক্তিকে তিনবারের বেশি রাখার নিয়ম না থাকার পরও তিনি চেম্বারের ইতিহাসে টানা পাঁচবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহাল রাখতে হাইকোর্টে রিট করার মাধ্যমে ওই পদের গঠনতান্ত্রিক আইনের পরিবর্তনও করা হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও অনুগত থাকায় মাহবুবুল আলমকে চেম্বার থেকে সরাতে চাননি এম এ লতিফ। এমনকি ২০১৬ সালে তারা (লতিফ-মাহবুবুল) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিটিও উইংয়ে গিয়ে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী প্রেসিডেন্ট পদে তিনবারের সময়সীমা বাতিল করেন। ডিটিও থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর তারা চেম্বারের এজিএমে (বার্ষিক সাধারণ সভা) আইনটি পাশও করিয়ে নেন। এরপর মাহবুবুল আলম এফবিসিসিআইয়ে চলে যাওয়ায় চট্টগ্রাম চেম্বারকে কব্জায় রাখতে তার ছেলেকে (ওমর হাজ্জাজ) প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেন লতিফ।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ‘মাহবুবুল আলম সাহেবকে চেম্বার প্রেসিডেন্ট রাখতে হাইকোর্ট থেকে আইন পরিবর্তনের যে বিষয়টি আনা হয়েছে, এটি ঠিক নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টরি ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডিটিও) থেকে একটি আইন করে চেম্বার প্রেসিডেন্টদের সময়সীমার বিষয়টি পরিবর্তন করা হয়েছে। এমপিদের মতো সকল সাংগঠনিক ইলেকশনে নির্বাচিতরা দুই বা ততোধিকবার দায়িত্ব নিতে পারবেন।’

এ তথ্যের সত্যতা জানতে কথা হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে কোনো ব্যবসায়ী সংগঠনের পদ ও পদসীমা নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে এমন কোনো কিছু প্রকাশ করা হয়নি।’

যেভাবে সাজানো হয় ২০২৩ সালের নির্বাচন

ব্যবসায়ী সংগঠনটির বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন লতিফপুত্র ওমর হাজ্জাজ ও মাহবুবুলকন্যা রাইসা মাহবুব। ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট চেম্বারের পরিচালনা পরিষদ দুজনকে ওই দায়িত্ব দেয়। এর আগে চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল এফবিসিসিআইয়ের দায়িত্বে যাওয়ায় নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে সংগঠনটি। তবে ওই বছরের ১৭ জুলাই চেম্বারে নেতৃত্বের সংকট নিয়ে কথা হলে চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেছিলেন, ‘এফবিসিসিআই নির্বাচন কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। প্রেসিডেন্ট এখনো তার পদে বহাল আছেন। তাছাড়া আমাদের চেম্বারে তো নেতৃত্বের অভাব নেই। কেউ না কেউ তো আসবেনই।’
একইভাবে চেম্বার পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেছিলেন, ‘তিনি (মাহবুবুল আলম) চট্টগ্রামে আসলে হয়তো এ বিষয়ে একটা আলোচনা হবে। তবে এ বছরের শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তখন ২৪ সদস্যের নতুন একটি পরিচালনা পরিষদ তৈরি হবে।’

অথচ ওই বছরের ৮ আগস্ট চেম্বার পরিচালনা পরিষদের সভা ডেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, ‘চেম্বারের পরিচালকমণ্ডলী নির্বাচনের লক্ষ্যে গত ১৫ জুন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৫ সেপ্টেম্বর চেম্বার পরিচালক পর্ষদ নির্বাচনের সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু মনোনয়নপত্র দাখিলের নির্ধারিত সময়সীমা ৬ আগস্ট বিকাল ৩টা পর্যন্ত অর্ডিনারী ক্যাটাগরিতে ১২ পদের বিপরীতে ১২ প্রার্থী, এসোসিয়েট ক্যাটাগরিতে ৬টির বিপরীতে ৬জন, টাউন এসোসিয়েশন গ্রুপে ৩ পদের বিপরীতে ৩জন এবং ট্রেড গ্রুপে ৩ পদের বিপরীতে ৩ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যা যাচাই-বাছাইয়ের পর নির্বাচন কমিশনে বৈধ বলে গৃহীত হয়। ফলে প্রতিটি পদের বিপরীতে প্রার্থীর সংখ্যা সমান হওয়ায় ২৪ জন পরিচালকই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।’
কেন শ্বেতহস্তিতে রূপ নিলো ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার?

পৃথিবীর ছয় থেকে সাতটি দেশের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার পরিদর্শন করে চট্টগ্রামে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। বিভিন্ন আয় বাড়ানোর পরিকল্পনাসহ গবেষণা কেন্দ্র, মেলার স্থান, অফিস স্পেস, শো রুম ও এক্সিভিশন হল নির্মিত হওয়ার কথা থাকলেও সাদামাটাভাবেই গড়ে তোলা হয় এই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। তাই ভবনটির মালিকানায় থাকা চেম্বার ১২ বছর পরও লাভের মুখ দেখতে পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংগঠনটির সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি ছয়-সাতটি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভিজিট করে চট্টগ্রামেও গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিই। এটার একটা ডিজাইনও করেছিলাম। ডিজাইনে নিচের দুটি ফ্লোর পার্কিং রেখে ছয়তলা পর্যন্ত এক্সিভিশন, বিভিন্ন ফেয়ার (মেলা), কনফারেন্স ও সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য স্পেস রাখার পরিকল্পনা ছিল। এর উপরে দুটি টাওয়ার উঠার কথা। একটি টাওয়ারে সব অফিস হতো। অন্য টাওয়ারে সব শো-রুম থাকত। এমন কিছুই তো তারা করেনি। এটা করার সময় তারা আমাকে আর ডাকেওনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী থেকে এক একর জায়গা নিয়েছি। এরপরও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার অব নিউইয়র্কের কোনো আপত্তি না রাখার জন্য পাশের আগ্রাবাদ দীঘির পাড় পর্যন্ত আমরা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহায়তায় রেলওয়ে থেকে জায়গাটা নিই। সেখানে শর্ত ছিল- আমরা ওই জায়গার পরিবর্তে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের একটি ফ্লোরে রেলওয়েকে অফিস হিসেবে দেব। এসবতো কিছু করা হয়নি। এমনকি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারটি দৃষ্টিনন্দনও হয়নি। তারা যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী করতো, তাহলে এটা থেকে প্রতিমাসে কোটি টাকার উপরে আয় আসতো।’

চেম্বারের স্বৈরতন্ত্রে নাখোশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

চেম্বারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে পরিচালনা পরিষদ ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবেই কাজ করাতে চাইতেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। আদেশ না মানলে বা কেউ বিরুদ্ধাচরণ করলে অফিসের কাজ সেরে ঘরে ফেরার আগে দেওয়া হতো বরখাস্তপত্র। এমন অনিয়মে চেম্বার থেকে চাকরি হারান ১৭ জন।
তাদের মধ্যে শওকত নামে চেম্বারের একজন চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি ১৯৯১ সালের ৭ জুলাই চেম্বারে কাজ শুরু করি। চেম্বারে কর্মরতদের নিয়ে একটি এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশন আছে। আমি সেটির দায়িত্বেও ছিলাম। চেম্বারের অ্যাকাউন্টস মেম্বারশিপসহ বিভিন্ন সেকশনে কাজ করেছি। বেশ কিছু বোর্ড মেম্বার চেম্বারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে ব্যক্তিগত কাজে লাগাতেন। এটি আমার পছন্দ হতো না। আমি বিভিন্ন সময়ে এসবের বিরুদ্ধে কথাও বলেছি।’

‘এরপর ২০২২ সালের ৪ জুলাই আমি অফিস শেষ করে বের হওয়ার সময় আমাকে চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হয়। আমার পাওনা বুঝে নেওয়ার জন্য অ্যাকাউন্টসে যোগাযোগ করতে বলা হয়। আমার প্রশ্ন হলো- আমি এতোদিন যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি, সে প্রতিষ্ঠান কি আমাকে একটা সতর্কীকরণ চিঠিও দিতে পারেনি? এরকম শুধু আমি না, আমার মতো আরও ১৭ জনকে অফিস শেষ করে বের হওয়ার সময় চিঠি দিয়ে বরখাস্ত করা হয়েছে।’-যোগ করেন শওকত।
যা বলতে চান বর্তমান প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ
চেম্বারের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ বলেন, ‘আমাদের মেম্বাররা দাবি জানাতেই পারেন। আমরা দেখেছি, কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী ও অন্যান্যরা এসে দাবি জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টি বোর্ডকে জানাবো। এখানে কিছু কিছু অভিযোগ এসেছে যা আসলে ভিত্তিহীন। তবে চেম্বারের একজন মেম্বারও যদি কোনো দাবি করেন, আমরা অবশ্যই সেটি মূল্যায়ন করবো। বোর্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর উনারা চাইলে আমাদের গভর্নিং বডি বা মিনিস্ট্রি অব কমার্সের কাছে যেতে পারেন।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়