আগামী ২০ বছরের আগাম প্রস্তুতি
যশোরের চাঁচড়া ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপ কেন্দ্রে যুক্ত করা হয়েছে হাইভোল্টেজ ক্যাপাসিটি। বিগত কয়েকদিন কর্মযজ্ঞের পর গতকাল দিনভর ৩৩ কেভির বাসবার আপগ্রেড করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের কারণে গতকাল বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ ছিল। বর্তমানে চাঁচড়া ৩৩ কেভির বিদ্যূৎ ধারণ ক্ষমতা সাড়ে ৪শ’ অ্যাম্পিআর থেকে ২০০০ অ্যামপিআরে উন্নীত হয়েছে। যুক্ত হয়েছে আগামী ২০ বছরের আগাম প্রস্তুতি।
বর্তমানের গ্রাহক ছাড়া নতুন আরো ৩গুন গ্রাহককে সংযোগ সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে। জেলার কোথাও আর থাকবে না লো-ভোল্টেজ বিড়ম্বনা। জেলার চাহিদামত বিদ্যুৎ নিরবিছিন্নভাবে সরবরাহ করা যাবে।
একদিকে যশোরের চাঁচড়া ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপ কেন্দ্রে উন্নীত হতে যাচ্ছে ২৩০/১৩২ ভেভিতে। বাংলাদেশ ও চায়না সরকারের চুক্তির জি-টু-জি প্রকল্পের আওতায় যশোরে চলছে শত কোটি টাকার কর্মযজ্ঞ। কেন্দ্রটি হবে গ্যাস আইসুলুটেড। ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎ সফলভাবে সঞ্চালন করা হবে।
এদিকে, গতকাল ৩৩ কেভির সাবস্টেশনের বাসবার আপগ্রেড করা হয়েছে। এক কথায় আরো অত্যাধুনিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে এবং বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগকে আরো সক্রিয় করতে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানী অব বাংলাদেশ লিমিটেডের এই কার্যক্রম।
তথ্য মিলেছে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় জেনারেটিং স্টেশনের পুরো সিস্টেমের জন্য বাসবার ব্যবহৃত হয়। বাসবারের সাথে সকল জেনারেটর, ট্রান্সফরমার এবং ফিডার সংযুক্ত থাকে। নীতিগতভাবে সকল জেনারেটর, সার্কিট ব্রেকার ও আইসোলেটরের মাধ্যমে বাসবার সংযুক্ত হয়। আউটগুইং বা নির্গত ফিডারে সংযুক্ত ট্রান্সফরমারের উভয় পাশে আইসোলেটর থাকে। ছোট ছোট এসি জেনারেটিং স্টেশনে এবং ডিসি স্টেশনে এ ধরনের বাসবার ব্যবহৃত হয়। আর এভাবেই নয়া প্রযুক্তি, টুল্স ও স্টুমেন্টস রিপ্লেসমেন্টের মাধ্যমে যশোর চাঁচড়া ৩৩ কেভির বাসবার আপগ্রেড করা হয়েছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবির) এ অঞ্চলের গ্রিড মেইনটেন্স অফিস ঝিনাইদহ ও যশোরে চাঁচাড়া গ্রিড উপ কেন্দ্র বলছে, উচ্চ ভোল্টেজের সঞ্চালন নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি লোভোল্টেজ সমস্যার সমাধান হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার চায়না সরকারের মধ্যে আথির্ক চুক্তি জি-টু-জি প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের বিভিন্ন উপকেন্দ্র ও ন্যাশনাল গ্রিডকে ক্রমোন্নয়নের মাধ্যমে আরো কার্যকর করে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একনেকে পাশ হওয়ার পর শুরু হয় কার্যক্রম।
বর্তমানে যশোর জেলা বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ৪শ’ অ্যাস্পিআর বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে, যা আগে থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন সময় লোভোল্টেজ সমসা হচ্ছে। আর গতকাল বাসবার আপগ্রেডের কেভির ধারণ ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২০০০ অ্যাম্পিয়ারে। বর্তমানে ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুতে যে সংখ্যক গ্রাহক রয়েছে কেভির বাসবার আপগ্রেডের কারনে তার ৩ গুন গ্যাহককে নতুন সংযোগ দেয়া যাবে। এছাড়া আগামী ২০ বছর পর্যন্ত যশোর জেলার বিদ্যুৎ চাহিদা এই ২০০০ অ্যাম্পিয়ার থেকে উচ্চ ভোল্টেজে সঞ্চালন করা যাবে।
গতকালের বাসবার আপগ্রেড হওয়ার কারণে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি লো ভোল্টেজ সমস্যার সমাধান করা হলো বলে দাবি প্রকল্পের প্রকৌশলীদের।
জি-টু-জি প্রকল্পের প্রকৌশলীদের দাবি, সারাদেশে এখন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি’র) বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ৪০০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন, ২৩০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ১৩২ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন সঞ্চালন লাইন রয়েছে। এছাড়া ৪০০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি এইচভিডিসি ব্যাক টু ব্যাক স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ৪০০/২৩০ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন, ৪০০/১৩২ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন, ২৩০/১৩২ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন, ২৩০/৩৩ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন এবং ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে যশোরের চাঁচড়ায় ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপ কেন্দ্র তার সার্ভিস দিয়ে আসছে। আর এসব কেভি গ্রিড স্টেশনের বাসবার আপগ্রেড হচ্ছে। যশোরের চাঁচড়া ৩৩ কেভির সাবস্টেশনের বাসবার আপগ্রেডের মাধ্যমে যশোর বিদ্যুতে সংযুক্ত হলো নয়া দিগন্ত।
এব্যাপারে (পিজিসিবি’স) জি-টু-জি প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় সরকার জানিয়েছেন, যশোরের চাঁচড়ার ৩৩ কেভির বাসবার আপগ্রেড সম্পন্ন হয়েছে। বাসবার ব্যবহারের সুবিধা হলো, এর মাধ্যমে একাধিক জায়গায় একধিক বিদ্যুৎ সংযোগ খুব সহজে দেয়া সম্ভব। বাসবার অনেক বড় হতে পারে। সেটা বড় কথা নয়। মূলত বাসবার টা কতটুকু উচ্চতা আর কতটুকু মোটা সেটার উপর নির্ভর করে বাসবারের কারেন্ট আম্পিয়ার। ৩৩ কেভির বাসবার আপগ্রেড একটি দুরদর্শী পদক্ষেপ। এখন যে পরিমান সংযোগ রয়েছে নতুন করে তার ৩ গুন সংযোগ দেয়া যাবে। অর্থাৎ, আগামী ২০ বছর পর্যন্ত যত গ্রাহক হবে তার বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সংযোগ দেয়া যাবে।
সাব ডিভিশাল ইঞ্জিনিয়ার সুদিপ্ত কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, (পিজিসিবি) সারাদেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বে নিয়োজিত একমাত্র প্রতিষ্ঠান। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবার নিকট মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নির্ভরযোগ্য সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন সিস্টেমের পরিবর্ধন করে যাচ্ছে। গবেষণা প্রকৌশল ডিজাইন প্রস্ততের মাধ্যমে সঞ্চালন লাইন এবং গ্রীড উপকেন্দ্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে যাচ্ছে এবং যশোরে ৩৩ কেভি বাসবার আপগ্রেড সময় উপযোগী পদক্ষেপ। যশোরের সব মানুষের ঘরে ঘরে উচ্চ ভোল্টেজে বিদ্যুৎ পৌঁছাবে। লোভোল্টেজ বিড়ম্বনা আর থাকবে না। হাইভোল্টেজ ক্যাপাসিটির বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। সব মিলিয়ে যশোরে বিদ্যুৎ সেক্টরে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে এই ৩৩ কেভি গ্রিডটি।