Print

Rupantor Protidin

৬০ বছর আগে পিতার বিক্রয়কৃত জমি দখল নিতে মরিয়া ছেলে

প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ১৭, ২০২৪ , ৮:১৩ অপরাহ্ণ | আপডেট: মার্চ ১৭, ২০২৪, ৮:১৪ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

৬০ বছর আগে পিতার বিক্রয়কৃত জমি তার মৃত্যুর পর দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ছেলে জোহর আলী সরদার। ক্রয়কৃত ওই জমির মালিকদের উচ্ছেদ করতে প্রভাবশালী এক ইউপি মেম্বরের সেল্টারে বিভিন্ন রকম প্রবাকান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে জোহর আলীসহ তার সহযোগীরা। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে । ঘটনাটি সাতক্ষীরা তালা উপজেলার ইসলামকাটি গ্রামের।

খোজখবর নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার ইসলামকাটি পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত এছাবদী সরদারের ছেলে এসএ রেকর্ডীয় মালিক মোজহার আলী সরদার ও মেয়ে ফুকদি বিবি’র নিকট থেকে ১৯৬৬ সালে ইসলামকাটি মৌজার ১৭৬ খতিয়ান ও ৮৪১ খতিয়ানের জমি দুইটি রেজেস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে মোট ৯টি দাগে সাড়ে ৯৫ শতক জমি ক্রয় করেন একই গ্রামের মৃত দবির উদ্দিন খানের ছেলে শাহজাহান আলী খাঁন। এর পর থেকে ডাঙ্গা এবং বিলান শ্রেণির ওই সব জমিতে দীর্ঘ দিন হালচাষ করে ফসল ফলিয়ে আসছিলেন কৃষক শাহজাহান আলী খাঁন। পরবর্তীতে তিনি ওই জমি নিজ নামে নামপত্তন করেন।

শাহজাহান আলী খাঁনের মৃত্যুর পর পৈত্রিকসুত্রে তিন ছেলে সিরাজুল ইসলাম খাঁন, রিজাউল করিম খান, আজাহারুল ইসলাম খাঁন ও একমাত্র মেয়ে তহমিনা খাতুন এবং স্ত্রী আইজান বিবি জমির দখলশর্ত বুঝে পান। পরবর্তীতে জমির দলিল ও নামপত্তন অনুযায়ী তাদের নামে মাঠ জরিপসহ ৩০/৩১ ধারার মাধ্যমে রেকর্ড অনুসারে প্রিন্ট পর্চায় তাদের নাম অন্তরভুক্ত হয়। সেই থেকে সাড়ে ৯৫ শতক জমি মৃত শাহজাহান আলী খাঁনের ছেলে সিরাজুল ইসলাম গংরা ওই জমিতে শান্তিপূর্ন ভাবে চাষাবাদ করে আসছে। সস্প্রতি সিরাজুল ইসলামের ভাতিজা মোঃ বাদশা খাঁন তার পিতার পৈত্রিকসুত্রে পাওয়া ভোগদখলীয় ওই জমিতে সেবা এগ্রো লিঃ কর্তৃক একটি সবজির হ্যাচারী জন্য বাঁশ-খুটি দিয়ে মাচা তৈরী করে।

আর তখনি বিপত্তি ঘটে। হঠাৎ দীর্ঘ ৬০ বছর পর ওই জমির মালিক দাবি করেন মৃত মোজহার আলী সরদারের ছেলে সুচতুর জোহর আলী সরদার বাঁধা প্রদান করে কোটে ১৪৫ ধারায় মামলা ঠুকে দেন। এঘটনায় গত ১৩ মার্চ ওই জমিতে প্রবেশ না করার জন্য কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তালা থানা পুলিশ সিরাজুল ইসলাম গং ও তার ভাতিজাদের নোটিশ করেন। পিতার বিক্রয়কৃত জমি কিভাবে ছেলে নিজের নামে দাবিকরে কোর্টে সিরাজুল ইসলাম গংদের বিরুদ্ধে ১৪৫ ধরা করলেন এ নিয়ে এলাকায় রিতিমত আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
এ ব্যাপারে সিরাজুল ইসলাম খাঁন জানান, আমার পিতা ১৯৬৬ সালে প্রতিপক্ষ জোহর আলী সরদারের পিতা ও তার ফুফুর নিকট থেকে রেজিষ্ট্রি দলিলমূলে সাড়ে ৯৫ শতক জমি ক্রয় করে। সেই থেকে আমরা ভোগ দখলে আছি। কিন্তু এখন জানতে পারি আমার পিতার ক্রয়কৃত ওই সম্পত্তির দলিল গোপন করে তার মৃত পিতার নামে পূর্বের এস এ রের্কড দেখিয়ে সে ও তার বোনদের নামে সহকারী কমিশনার ভূমি অফিস থেকে কৌশলে একটি নামজারি রেকর্ড বের করে জমি দখলের পায়তারা শুরু করেছে। ওই ভূয়া নামজারির বিরুদ্ধে আমরা ১৫০ ধারায় একটি মামলা করেছি। যেটি চলমান রয়েছে।

তিনি আরও জানান, স্থানীয় ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বর আসাদের সেল্টারে জমি দখল নিতে বিভিন্ন রকম সড়যন্ত্র করে আমাদের বিরুদ্ধে কোর্টে ১৪৫ ধারার একটি মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করছে। এমনকি জমি দখল নিতে বিভিন্ন ধরনে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমাদের পরিবারটি এখন জীবনের নিরাপত্তহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ মোল্যা জানান, আমার বাড়ীর সামনের জমিটি দেখামতে দীর্ঘ ৩০/৪০ বছর ধরে সিরাজুল ইসলাম খাঁন ও তার পরিবারের লোকজন ভোগদখল করে আসছেন।

জানামতে সিরাজুল ইসলাম খাঁনের পিতা জোহর আলী সরদারের পিতা ও ফুফুর নিকট থেকে ক্রয় করেন। তাদের নামে রেজিষ্ট্রি দলিলও রয়েছে। জোহর আলী সরদারের নিকট বারবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বর আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, বিষয়টি আমি হ্যান্ডেলিং করছি। আমার বয়স ৪৭ বছর। আর ১৫ বছর ধরে মেম্বারি করছি। জমির দখলে থাকা সিরাজুল ইসলাম খানদের ১৯৬৬ সালের একটি দলিল রয়েছে সেটি মূলত জাল দলিল। জোহর আলী সরদারের মোবাইলে কথা বলার জন্য নাম্বার চাইলে মেম্বর বলেন তার মোবাইল নাম্বার দেওয়া নিষেধ। তবে আমি আপনার সাথে পরে তার যোগাযোগ ও দেখা করিয়ে দিব।