Print

Rupantor Protidin

অবশেষে ঘোড়াঘাটের কথিত মোজাম পার্ক সিলগালা স্থানীয়দের উচ্ছ্বাস

প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ১২, ২০২৪ , ১২:৩৩ অপরাহ্ণ | আপডেট: মার্চ ১২, ২০২৪, ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

অবশেষে দিনাজপুর ঘোড়াঘাটের কথিত মোজাম বিনোদন পার্ক সিলগালা করলো স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয়দের উল্লাস। মোজাম বিনোদন পার্কে ৪০ বার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। পার্কের আবাসিক কক্ষে ঘটেছে হত্যাকাণ্ড। মালিককে দেয়া হয়েছে ৭ বার দণ্ড। আটক হয়েছে শতাধিক নারী ও দেড় শতাধিক খদ্দের।

উপজেলার বুলাকীপুর ইউনিয়নের কালুপাড়া গ্রামে বিশাল আমবাগানের মাঝে আবাসিক কক্ষ গড়ে তুলে দীর্ঘ ৪ বছর থেকে চলছিল প্রকাশ্য অসামাজিক কার্যক্রম। সামাজিক বিনোদনমূলক কোন স্থাপনা না থাকলেও, স্থানটির নাম দেওয়া হয়েছিল মোজাম বিনোদন পার্ক। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পতিতা নারীদেরকে কাজের ভিত্তিতে টাকা দেওয়ার চুক্তিতে পার্কটিতে নিয়ে আসা হতো। তাদের মাধ্যমে সারাদিন ছোট্ট কুঠরি রুম গুলোতে চলতো পতিতাবৃত্তির রমরমা ব্যবসা।

গত ২০২০ সালে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ১নং বুলাকীপুর ইউনিয়নের কালুপাড়া গ্রামে এই পার্ক গড়ে তোলেন স্থানীয় মোজাম্মেল হক মোজাম। তিনি ওই ইউনিয়নের বলগাড়ী গ্রামের মৃত কফিলউদ্দিন মণ্ডলের ছেলে। ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ মার্চ পর্যন্ত পার্কটিতে ৩৯ বার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন উপজেলা প্রশাসন। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ।

এসব অভিযানে আটক হয়েছেন শতাধিক নারী এবং দেড় শতাধিক খদ্দের। এছাড়াও পার্ক মালিক মোজামসহ তার জামাতা আটক হয়েছেন ৭ বার। মোবাইল কোর্টের নেতৃত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আটক সকলকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড প্রদান করেছেন। তবে কোন অভিযান কাবু করতে পারেনি পার্ক মালিক মোজামকে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি বারবার পার্কের আড়ালে সেখানে পতিতাবৃত্তির ব্যবসা চালিয়ে গেছেন।

গত ২০২২ সালের ১০ আগস্ট কথিত পার্কটির আবাসিক কক্ষ থেকে পার্কের নৈশপ্রহরী ছুরিকাঘাত করা মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এই ঘটনায় নিহতের পরিবারের করা হত্যা মামলায় কারাগারে গেছেন পার্ক মালিক মোজাম ও তার জামাতাসহ পার্কের আরও ৩ কর্মচারী। তবে কোন কিছুই দমাতে পারেনি মোজামকে। সর্বসাধারণ চিত্তবিনোদন স্থান আইন ১৯৩৩ এর কয়েকটি ধারা এবং আল কুরআনের সূরা আল নিসার দু-একটি আয়াতের অপব্যাখ্যা দিয়ে প্রশাসন ও সচেতন মানুষকে বিভ্রান্ত করতো পার্ক মালিক মোজাম।

সর্বসাধারণ চিত্তবিনোদন স্থান আইন ১৯৩৩ এর ৮ ধারা থেকে জানা যায়, উক্তরূপ পার্ক বা অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালনার স্থান বন্ধ করার ক্ষমতা কেবল মাত্র জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের রয়েছে। এছাড়াও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত আদেশে যেকোনো পুলিশ কর্মকর্তা পার্ক বন্ধের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে বারংবার ইউনিয়ন পরিষদ, থানা পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসনের কাছে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দিলেও, পার্ক বন্ধ করার বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি প্রশাসন। তাদের ক্ষমতা মোবাইল কোর্টেই সীমাবদ্ধ ছিল।

তবে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহমেদের নির্দেশে গত রবিবার বিকালে কথিত মোজাম বিনোদন পার্কে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। আটক হয় দুই নারীসহ দুই খদ্দের। আটক ৪ জনকে ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন মোবাইল কোর্ট। এতে নেতৃত্বে দেন ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল ইসলাম,সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ও ঘোড়াঘাট থানার ওসি আসাদুজ্জামান আসাদ। পরে মোবাইল কোর্ট পার্কটিকে সিলগালা করে দেন। এই খবর ছড়িয়ে যাবার পরেই স্থানীয়দের মাঝে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে।

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, কোন ধরনের লাইসেন্স ছাড়াই পার্কটি পরিচালিত হচ্ছিল। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে অভিযোগ ছিল যে, সেখানে অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তাই পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত পার্কটি সিলগালা করা হয়েছে। স্থানটির মালিক যদি চিত্ত বিনোদন স্থানের লাইসেন্সের আবেদন করে, তবে যাচাই বাছাই করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তবে পার্কের আড়ালে অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করার কোন সুযোগ নেই।