Print

Rupantor Protidin

বেইলি রোডের আগ্নিকান্ড নিহত যশোরের ছেলে রকি

মায়ের সাথে দোয়া-দরুদ পড়তে পড়তেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে

প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ১, ২০২৪ , ৮:২৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: মার্চ ১, ২০২৪, ৯:৩৮ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

“আমার সোনা (নিহত কামরুল হাবিব রকি) প্রথমে আমার ভাইরে ফোন করে বলে যে ‘মামা আমারে বাঁচাও’। এরপরে আমি আমার ফোন দিয়ে আমার সোনারে ফোন দিই, তখন আমার সোনা বলে, ‘আম্মা আমি মনে হয় আর বাঁচপান না। তখন আমি আমার সোনারে কলমা পড়তি বলি, আমিও কলমা পড়ছি আমার সোনাও আমার সাথে কলমা, দোয়া-দরুদ পড়ছে। কলমা পড়তি পড়তিই কল কেটে যায়, তারপর থেকে আর আমার সোনারে ফোন দিয়ে পাইনি, পরে খবর পেলাম আমার পরান পাখি আর নেই।” খাটিয়ার পাশে বসে আহাজারি করতে করতে এভাবেই কামরুল হাবিব রকি’র মৃত্যুর শেষ সময়ের বর্ণনা দিচ্ছিলেন তার মা রিপা বেগম।

গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে লাগা আগুনের ঘটনায় সাততলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামের খাবারের দোকানের ক্যাশিয়ার ছিল কামরুল হাবিব রকি। তিনি যশোর সদর উপজেলার ধোপাখোলা গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে।

শুক্রবার সকালে তার গ্রামের বাড়িতে মরদেহ নিয়ে আসা হয়। এরপর থেকে রকিকে এক পলক শেষ দেখা দেখতে বাড়িতে ভিড় করে প্রতিবেশী এবং আত্মীয় স্বজনরা। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে গোটা পরিবেশ।

নিহতের প্রতিবেশী এবং স্বজনরা জানান, অগ্নিকাণ্ডে নিহত কামরুল হাবিব রকির পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তার বাবা কবির হোসেন পেশায় ইজিবাইক চালক। পার্শবর্তী গাজির দরগাহ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে আড়াই মাস আগে ঢাকায় ‘কাচ্চি ভাই’ হোটেলে ক্যাশিয়ার পদে যোগদান করেন তিনি। অগ্নিকাণ্ডের ধোয়ায় রকি অক্সিজেন ফেল করে মারা যান বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।

নিহতের বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘১৫ দিন আগে রকি বাড়িতে এসেছিল। ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ফরম তুলে আবার ঢাকায় ফিরে যায়। আমার ছেলেকে আমি এভাবে হারাবো আমি কোনদিন ভাবতে পারিনি। আমার ছেলে আমার সাথে সংসারের হাল ধরতে গিয়ে আজ লাশ হয়ে ফিরে আসলো।’ নিহতের প্রতিবেশী পলাশ হোসেন বলেন, ‘কামরুল হাবিব রকি ছেলে হিসেবে অনেক ভালো এবং ভদ্র। গ্রামের সকলেই তাকে অনেক স্নেহ করতো। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। যেকারণে অল্প বয়সে উপার্জনের রাস্তায় নেমেছিল সে।’

শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজের পর রকি’র জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।