শরতের সন্ধ্যা, আলোকসজ্জা-রোশনাইর খামতি নেই। এত আয়োজন যাদের, নেই তাদের চোখের আলো। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কণ্ঠে ঢেলে দিয়েছেন মধু। সেই সুরের সুধায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা মাতালেন হাজারো শ্রোতাকে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বকশীবাজারের নিজস্ব কার্যালয়ে সন্ধ্যায় এভাবেই জাতীয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সংস্থা তাদের ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে। এর আগে দিনব্যাপী কেক কাটা, আলোচনা সভা ও আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। সারাদেশের ছয় শতাধিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এ মিলনমেলায় অংশ নেন।
পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখতে না পেলেও অনুভূতির শক্তিতে জীবনভর শিল্পসাধনা করেছেন। এরই মুগ্ধতার রেশ ছড়িয়ে ঝলমলে প্রতিভার ছাপ রাখেন দৃষ্টিহীনরা। তারা আবহমান বাংলার শিকড়ের সংস্কৃতি পল্লিগীতি, লালন, হাছন রাজার গানগুলো নিজেদের কণ্ঠে তুলে অপার মহিমায় ছড়ান মুগ্ধতা! সুরের ঢেউয়ের পাশাপাশি শাস্ত্রীয় নাচেও দর্শকদের মাত করেন।
গতকাল বকশীবাজারের কার্যালয়ে ঢুকতেই মন কাড়ে নান্দনিক সাজসজ্জা ও ফুলে আচ্ছাদিত প্রবেশপথ। চোখে সানগ্লাস, হাতে সাদাছড়ি– এর পরও বরণে ভিন্ন এক মায়া। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা অতিথিদের দেখতে না পেলেও ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেন। আলাপকালে জানা যায়, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের অনেকেই শিক্ষিত ও কর্মমুখী; চলেন একা পথ। অনুষ্ঠান ঘিরে দৃষ্টিহীন স্কুলশিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বাচিক, সংগীত ও নৃত্যশিল্পীদের বসে মিলনমেলা। দেখতে না পেলেও সমাজের অন্য দশজনের মতোই তাদের জীবনযাপন। একজন আরেকজনকে স্পর্শের আলিঙ্গনে চিনতে পারছেন, অবলীলায় বলছেন, ‘কতদিন তোকে দেখি না…।’ মঞ্চ থেকেও ঘোষণা দেওয়া হলো– দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভাইবোনদের ‘দৃষ্টি’ আকর্ষণ করছি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। সংস্থার চেয়ারম্যান নুরুল আলম সিদ্দিকের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব আইয়ুব আলী হাওলাদারের সঞ্চালনায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের উপপরিচালক ভবেন্দ্রনাথ বাড়ৈ, লালবাগ জোনের উপপুলিশ কমিশনার মো. জাফর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জমকালো এ আয়োজনে দেশের ১০০ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে তিন হাজার, বয়স্কভাতা হিসেবে ২০ জনকে মাসিক এক হাজার করে একসঙ্গে দুই মাসের অর্থ ও ৫০ জনকে তিন হাজার করে নগদ টাকা দেওয়া হয়। আটজনকে পুনর্বাসনের আওতায় আটটি সেলাই মেশিন, ১২ জনকে ঘর নির্মাণে ১৫ হাজার করে, ২৪ জনকে তিন হাজার করে চিকিৎসা ভাতা, ১৪ জনকে ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য পাঁচ হাজার করে সহায়তা, চারজনের দাফন বাবদ তিন হাজার করে এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ১৮০ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা করে অনুদান দেন আয়োজকরা।