Print

Rupantor Protidin

গাজায় দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই একমাত্র পথ

প্রকাশিত হয়েছে: নভেম্বর ১৪, ২০২৩ , ৯:৩০ অপরাহ্ণ | আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২৩, ৯:৩০ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলা থামছে না। মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল ও বেসামরিক মানুষের বাড়িঘর সব জায়গায় হামলা চালাচ্ছে। ফলে গাজায় ভয়াবহ এক সংকট তৈরি হয়েছে, যা নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ ইসরায়েলি হামলা ও জ্বালানি সংকটে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বৃহত্তম দুই হাসপাতাল আল-শিফা ও আল-কুদস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। হাসপাতাল দুটির ভেতরে আটকা পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।

আশপাশের এলাকায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। সোমবার জাতিসংঘের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। ৭ অক্টোবর স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস যোদ্ধারা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালান। দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা নিয়ে তেলআবিবের সব দম্ভ গুঁড়িয়ে দেন যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে নিজেদের বদলে যাওয়া শক্তিমত্তা আর রণকৌশলেরও জানান দেয় হামাস। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের হিসাবে, এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছে এবং প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর এর জবাবে ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে এক মাস ধরে চলছে হত্যাযজ্ঞ গাজা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান ও স্থল হামলায় ১১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি শিশু। এছাড়া নারীর সংখ্যাও তিন হাজারের বেশি। হতাহতের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। ইসরায়েলি হামলায় প্রতি ১০ মিনিটে একটি করে শিশু মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পতনের দ্বারপ্রান্তে। ৩৬টি হাসপাতালের অর্ধেক এবং ভূখণ্ডটির প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর দুই-তৃতীয়াংশই এখন আর কাজ করছে না এবং এখনও যেসব হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র সক্রিয় রয়েছে, তাদের পরিস্থিতিও নাগালের বাইরে চলে গেছে।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের উত্তাপ ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। বদলে দিচ্ছে রাজনীতি-কূটনীতির নানা হিসাব-নিকাশ। কী হবে এই সংঘাতের ভবিষ্যৎ, তা নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধের দামামা বাজছে। গোটা অঞ্চলেই উত্তেজনার পারদ এখন তুঙ্গে, সরগরম রাজনীতির অঙ্গন। কোনো কূটনৈতিক তৎপরতাই সংঘাত বন্ধে কাজে আসেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসন বন্ধে পাঁচটি সুপারিশ পেশ করেছেন। ৯ নভেম্বর রিয়াদে অনুষ্ঠিত ৮ম বিশেষ ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে সম্প্রচারিত ভাষণে তিনি এ পরামর্শ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের একতরফা যুদ্ধ বন্ধে অবিলম্বে ‘যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানানো দরকার। এই যুদ্ধ অন্যায্য এবং এটি মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের নির্মম লঙ্ঘন। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজা জ্বলছে এবং এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েল কোনো বিরতি ছাড়াই নির্দয় তাণ্ডব চালাচ্ছে, হাসপাতাল ও বেসামরিক অবকাঠামোতে বোমাবর্ষণ করছে। বিধ্বস্ত গাজার আটকে পড়া বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী উপকরণের অবিচ্ছিন্ন, দ্রুত এবং নিরাপদ সরবরাহের জন্য অবিলম্বে একটি মানবিক করিডোর খোলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সুপারিশ করেছেন।

বিশ্বনেতারা প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিতে পারে। তুরস্ক, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশসহ সব রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনি সমস্যার একটি দ্বিরাষ্ট্রকেন্দ্রিক সমাধানের কথা বলেছে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতেও এটিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তি ও স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা ছাড়া এ যুদ্ধ ও সংঘাতের অবসান ঘটবে না। এ ক্ষেত্রে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই একমাত্র পথ। যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করে শান্তি আলোচনা শুরু করা জরুরি বলে মনে করছি।