ঝিকরগাছায় সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের হাজারো ভক্ত-পূর্নার্থীদের অশ্রুসিক্ত প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব।প্রতিমা বিসর্জনের প্রাক্কালে পুরোহিতদের ভক্তদের আশীর্বাদের সিঁদুর পরিয়ে দিতে দেখা যায়।নারী ভক্তদের মাঝে একে অপরের সিঁদুর পরিয়ে দিতে দেখা যায়। এসময় হাজারো ভক্ত-পুণ্যার্থী নারী-পুরুষ কপোতাক্ষ ঘাটে আগত প্রতিমা গুলোকে একে একে অশ্রুসিক্ত বিদায় জানান।

এবারের দুর্গোৎসবে উপজেলার পৌরসদরসহ ১১টি ইউনিয়নব্যাপি শারদীয় দুর্গোৎসবের বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়। আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয় প্রতিটি পূজামন্ডপ। এবার বেশিরভাগ পূজামন্ডপ ও মন্দিরের প্রতিমা ঐতিহ্যবাহী কপোতাক্ষ নদে বিসর্জন দেয়া হয়েছে। কোথাও কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালির চিরচরিত সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিন্দু ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশ ও আনন্দঘন উৎসব আয়জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো সর্ববৃহৎ দুর্গোৎসব। এবারের দুর্গাপূজায় বাড়তি আকর্ষণ ও সংযোজন ঘটে ‘মাতৃপূজা’র আয়োজনে। ‘মৃন্ময়ী ‘মা,কে টানা ৫দিনব্যাপি চিন্ময়ী রূপে আরাঁধনার পর দর্পণ বিসর্জন এর মাধ্যমে দুর্গতিনাশিনী মাতাকে মর্ত্যলোক হতে বিদায় জানানো হয়’। এটির আয়োজন করেন, কৃষ্ণনগর বারোয়ারী সার্বজনীন পূজা মন্দির কমিটি।

ঝিকরগাছা পৌরসদর কৃষ্ণনগর সার্বজনীন বারোয়ারি পূজামন্দির,কপোতাক্ষ পূজা উদযাপন পরিষদ, পালপাড়া পূজা উদযাপন পরিষদ,কীর্তিপুর সার্বজনীন পূজা মন্দির, কীর্তিপুর মিস্ত্রিপাড়া সর্বজনীন পূজা মন্দির কমিটি, রাজাপুর ঋষিপাড়া পূজা উদযাপন কমিটি আয়োজিত স স মন্দিরের প্রতিমাগুলো ঐতিহ্যবাহী কপোতাক্ষ নদে বিসর্জন দেয়া হয়।

এসময় কপোতাক্ষ নদে প্রতিমা বহনকারী একাধিক নৌকার পাশাপাশি ভক্ত-পুণ্যার্থীদের নৌকাভ্রমণ আনন্দের বাড়তি মাত্রা এনে দেয়। কপোতাক্ষ নদের বুকে এসময় এক অন্যরকম সৌন্দর্যমণ্ডিত ও অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। বিপুল সংখ্যক উৎসুক দর্শনার্থী কপোতাক্ষের দু’তীরসহ ঝিকরগাছা শহরের যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সেতুর উপর থেকে এই সৌন্দর্য উপভোগ করেন।

দুর্গাপূজা ঘিরে সন্ধ্যারতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গোৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রশাসক ভুপালি সরকার তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, সমন্বিত উদ্যোগ ও সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন হওয়ায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী,প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যবৃন্দ,পূজামণ্ডপ সমূহের পুরোহিত,আয়োজক কমিটির নেতৃবৃন্দসহ সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
একই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট,সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও পৌর প্রশাসক নাভিদ সারওয়ার ও ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ নূর মোহাম্মদ গাজী।

উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামাদ হাসান নিপুন উপজেলা প্রশাসন,আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী,পূজা উদযাপন কমিটির সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ, পুরোহিতসহ তাঁর দল,অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষা’ কমিটির স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা ও শারদীয়া দুর্গোৎসব সুশৃংখল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ঝিকরগাছা শাখার সভাপতি বাবু দুলাল চন্দ্র অধিকারী ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বাবু মৃণাল কান্তি দত্ত শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে অব্যাহত সহযোগিতা পাওয়ায় সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।