Print

Rupantor Protidin

নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের চাপ প্রত্যাশিত নয়

প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩ , ১:৩৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩, ১:৩৭ অপরাহ্ণ

রুপান্তর প্রতিদিন ডেস্ক

যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই বিদেশি দূতাবাসগুলো যেন রাজনীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়। সারা বছর এসব কূটনীতিক শীতলকক্ষে নিদ্রাযাপন করলেও জাতীয় নির্বাচন এলেই যেন তারা নির্ঘুম রাত কাটায়। কিছু বিদেশি কূটনীতিকের আচরণ দেখলে মনে হয় তারাই যেন বাংলাদেশের মানুষকে রাজনীতি শিখিয়েছে। এবং তারাই যেন এ দেশের মানুষের ভাগ্যনিয়ন্তা। নির্বাচন এলেই কূটনীতিকপাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিকদের বৈঠকখানায় পরিণত হয়। রাত-দিন অনেক রাজনীতিককে কূটনৈতিকপাড়ায় পড়ে থাকতে দেখা যায় এবং দফায় দফায় তাদের সঙ্গে মিটিং করতে দেখা যায়।
অথচ এসব কূটনীতিকের কথা অনুযায়ী যে এ দেশের মানুষ ভোট দেয় কিংবা ভোটে এসব কূটনৈতিকের কোনো প্রভাব যে পড়ে তেমনটা নয়। শুধু বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে কিছু সাহায্য-সহযোগিতা করে বলেই তাদের এত মাতব্বরি। অথচ মিয়ানমারের মতো দেশ এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে তাদের নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত করলেও তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারে না। নিরীহ ফিলিস্তিনদের যুগের পর যুগ ইসরাইলিরা নির্দয়ভাবে খুন করে গেলেও তাদের মুখে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে একটা বাক্যও উচ্চারিত হয় না। কয়েকটি দেশ পক্ষে বললেও জাতিসংঘে এ ব্যাপারে ভোটাভুটির সময় এসব দেশ এক হয়ে যায়। আর এদের কারণেই ফিলিস্তিনিদের মুক্তির আন্দোলন এত দীর্ঘায়িত হচ্ছে। অন্যদিকে এসব দেশ মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও কোনো কোনো দেশ চরম স্বৈরাচারী শাসক এবং রাজাদেরও সমর্থন দিতে কার্পণ্য করে না। এসব দেশ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের কথা বলে মাথা ঘামালেও পরবর্তীতে দেখা যায় এরা তাদের লাভের জন্যই এসব করছে। কোনো দেশে অর্থনৈতিক জোন গড়ে তুলছে, কোনো দেশে আবার যুদ্ধের সময় অস্ত্র বিক্রি করছে আবার কোনো দেশে নিজেদের ঘাঁটি গড়ে তুলেছে। মূলত বাংলাদেশে অবস্থানরত কূটনীতিকদের মধ্যে আমেরিকা এবং ইউরোপের বেশকিছু কূটনীতিক যেভাবে তাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভেঙে এ দেশের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মেলামেশা করছেন এবং ক্ষণে ক্ষণে মিডিয়ায় কথা বলছেন তা তাদের দেশে কোনো দেশের কূটনীতিকরা কখনই করতে পারবে না। প্রকৃতপক্ষে আমেরিকা এবং ইউরোপের কিছু দেশ এখনো বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে বিদেশের ওপর নির্ভরশীল একটি দেশ মনে করে। ফলে তারা এ দেশে জাতীয় নির্বাচন এলেই মাথা ঘামাতে শুরু করে; কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি যে আগের চেয়ে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে তা তারা টের পায়নি।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশে পদ্মা সেতুর মতো ব্যয়বহুল সেতু নিজ দেশের অর্থায়নে করে দেখিয়েছে। এর বাইরে ভূমিহীনদের জন্য পাকা ঘরসহ ভূমির ব্যবস্থা, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি এবং দেশের সব জেলায় অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন দেশ-বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উড়ালপথ নির্মাণ, চট্টগ্রামে টানেল নির্মাণসহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ- এসব বিষয়েও সবার নজর কেড়েছে। মূলত বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে যুগান্তকারী উন্নয়ন ঘটেছে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের কারণেই।
বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল আর এমন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে জনগণ জাতীয় নির্বাচনে তাদের ভোট দেবে কিনা এটা সম্পূর্ণ জনগণের ব্যাপার। এক্ষেত্রে বিদেশি কূটনীতিকদের কোনো ভূমিকা আছে বলে আমরা মনে করি না। এ দেশের রাজনীতি এ দেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতারাই বসে ঠিক করবেন। কোনো সমস্যা হলে তারা নিজেরাই বসে ঠিক করে নেবে। এখানে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে ধরনা দিয়ে কোনো লাভ আছে বলে আমরা মনে করি না। তাই আমরা প্রত্যাশা করব বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশের নির্বাচন, বাংলাদেশের সংবিধান এবং বাংলাদেশের মানুষ ও রাজনীতিকদের হাতে ছেড়ে দেবেন। তারা শুধু বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হবেন।

রতন কুমার তুরী : লেখক এবং শিক্ষক।