যশোরের মনিরামপুরে বিধবা হিন্দু নারীর ঘরের দরজা বন্ধ করে ভিতরে বসে মাদক সেবনের অভিযোগে উঠেছে নেহালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিএম খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ইউনিয়নের পাঁচাকড়ি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। স্থানীয় ওই নারীর ছেলেকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়ার সুযোগে তিনি বিধবার ঘরে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি জানাজানির পর গুরুত্বর অসদাচরণ ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জেলা বিএনপি ওই নেতার পদ স্থগিত করেছে। আজ শনিবার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। তবে খলিলুর রহমান দাবি করেছেন, তিনি দলীয় গ্রুপিংয়ের শিকার হয়েছেন।
বিধবা নারী জানিয়েছেন, দুই ছেলে মেয়ে রেখে দুই বছর আগে তাঁর স্বামী মারা গেছেন। ছেলেটি প্রতিবন্ধী হওয়ায় তিনি উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরে ছেলের জন্য ভাতার আবেদন করেছেন। এরপর তিনি খলিলুর রহমানের সাথে একাধিকবার ছেলের ভাতার বইয়ের বিষয়ে কথা বলেছেন। খলিলুর রহমান বাড়িতে বই পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে ওই নারীকে আশ্বস্ত করেছিলেন।
বিধবা নারী বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে খলিলুর রহমান ছেলের ভাতার বই নিয়ে আমার বাড়িতে এসে ঘরের ভিতরে ঢোকেন। এরপর তিনি আমার কাছে পাঁচ মিনিট সময় চান। আমাকে পাঁচ মিনিট ঘরে বসতে বলেন। এরপর আমার কাছে দিয়াশলাই চান তিনি। তার কথায় আমি ভয় পেয়ে মেয়েকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। এরপর খলিলুর রহমান ঘরের দরজা বন্ধ করে ভিতরে দীর্ঘক্ষণ বসে গাঁজা ও ইয়াবা সেবন করেন।
ওই নারী বলেন, এসব দেখে বাড়ির আশপাশের লোকজন কানাঘুষা শুরু করেন। আমি খুব ভয় পাই। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। পরে দ্রুত জসিম নামে একজনকে মোবাইল ফোনে ডেকে আনি। জসিম এসে দীর্ঘক্ষণ বারান্দায় বসে থেকে চলে যান। তারপরও খলিল নামের ওই ব্যক্তি ঘর থেকে বের হয়নি। পরে আরও লোকজন আসলে দরজা খুলে বেরিয়ে চলে যায় খলিল।
ওই নারী বলেন, আমি খুব ভয় পাচ্ছি। মনে হচ্ছে আমার ছেলে মেয়েকে নিয়ে আমার এখানে থাকা হবে না।
স্থানীয় বিএনপির সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমি ওই বাড়িতে যাই। তখন ইউনিয়ন সেক্রেটারি খলিলুর রহমান ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় আসেন। এরপর মোটরসাইকেলের চাবি খুঁজে নিয়ে তিনি চলে যান।
স্থানীয়রা বলছেন, এরআগেও খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে জেলা কমিটির কাছে বহু অভিযোগ জমা পড়েছে। বিষয়টি দিয়ে তদন্তও হয়েছে। এরআগে গত পাঁচ আগস্টের পর নেহালপুর ইউনিয়ন বিএনপির এই নেতার আপন ভাইপো সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক জামায়াত নেতার মাছ লুটের অভিযোগ উঠেছিল। তখন খলিলুর রহমান ভাইপোকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে নেহালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান বলেন, আমি বৃহস্পতিবার ওই নারীর ছেলের ভাতার বই নিয়ে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে ১০ মিনিট বসে আমি চলে এসেছি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য না। আমি দলীয় গ্রুপিংয়ের স্বীকার।
খলিলুর রহমান বলেন, দলীয় পদ স্থগিত সংক্রান্ত জেলা কমিটির চিঠি হাতে পাইনি। ফেসবুকে দেখেছি।
মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে সালিস করে টাকা নেওয়াসহ ১২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার বিরুদ্ধে তিনটি মাদক মামলার কাগজ আমি হাতে পেয়েছিলাম। এসব নিয়ে সম্প্রতি খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছেন জেলা কমিটি।
আসাদুজ্জামান মিন্টু আরও বলেন, গতকাল খলিলুর রহমানকে নিয়ে এক নারী সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর হয়তো জেলা কমিটি তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।