দিনমজুর আবদুল জলিল (ছদ্মনাম) কয়েক বছর আগে রাজধানীর আদাবরের বালুর মাঠ এলাকায় ভাড়া করা জমিতে চার রুমের টিনশেড ঘর নির্মাণ করেছিলেন। তিনি নিজে একটি ঘরে থাকতেন, আর বাকি ঘর ভাড়া দিয়ে মাসে প্রায় ৯ হাজার টাকা আয় করতেন। কিন্তু বছর খানেক আগে থেকেই কিশোর গ্যাংয়ের চাপের মুখে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
জলিল জানান, সম্প্রতি স্থানীয় গ্যাং সদস্য মনির ও গুজা মনিরের অনুসারীরা মাসে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় তাকে নির্দয়ভাবে মারধরও করা হয়। এমনকি আবারও হামলার হুমকি দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে তিনি নিরাপত্তার কারণে পরিবার নিয়ে অন্য এলাকায় সরে গেছেন।
শুধু জলিল নন, মোহাম্মদপুর-আদাবরের অনেক বাসিন্দা একই সমস্যার মুখোমুখি। তারা জানান, নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়; না হলে হামলার শিকার হতে হয়। সন্ধ্যার পর এলাকায় বের হতে ভয় পায় সাধারণ মানুষ। অপহরণ, ছিনতাই, মাদক বিক্রি, নারীদের উত্ত্যক্ত করা থেকে শুরু করে জমি দখল ও খুনোখুনি— সবই করছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা।
ভুক্তভোগীরা বলেন, এদের পোশাক-চুলের ধরন ভিন্ন, চলাফেরা ভীতিকর। ছোটখাটো ঘটনায়ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালায়। অনেকে বলছে, গ্যাংয়ের সদস্যরা চাঁদাবাজির যৌক্তিকতা দেখাতে বলে যে, জামিনের খরচ তুলতেই টাকা লাগে।
মোহাম্মদপুরের এক ব্যবসায়ী জানান, তিন বছর আগে ৩ কোটি টাকায় জমি কেনার সময় তাকে ১০ লাখ টাকা দিতে হয়েছিল। একই গ্যাংয়ের সদস্যরা পরে নতুন গ্রুপে যোগ দিয়ে আবারও একই দাবি জানায়।
র্যাব-২ এর কমান্ডিং অফিসার খালিদুল হক হাওলাদার জানান, গত এক মাসে মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকা থেকে ৮৮৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ২০টি গ্যাং শনাক্ত করা হয়েছে। কবজি কাটা আনোয়ার ও টুন্ডা বাবুর গ্রুপকে সবচেয়ে শক্তিশালী মনে করা হচ্ছে। অনেক সদস্য একাধিকবার গ্রেফতার হলেও জামিনে বের হয়ে আবারও একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণের ঘাটতির কারণে তারা সহজেই জামিন পেয়ে যায়। যদিও আদাবর থানার ওসি এস এম জাকারিয়া দাবি করেছেন— পুলিশ সবসময় প্রমাণসহ আসামি আদালতে হাজির করে, কিন্তু কেন তারা জামিন পায় তা পুলিশের জানা নেই।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডেপুটি কমিশনার ইবনে মিজান বলেন, “কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মূলত ভাসমান। তাদের স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় গ্রেপ্তার করা কঠিন হলেও আমরা কাউকেই ছাড় দেব না।”
গত সোমবার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় একটি গ্যারেজে অভিযানে গেলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে পুলিশ সদস্য আল-আমিন গুরুতর আহত হন। পরে অভিযান চালিয়ে ১০২ জনকে আটক করা হয় এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।