Print

Rupantor Protidin

নুরাল পাগলার দরবারে হামলা, সরকারের তীব্র নিন্দা

প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫ , ১০:৪০ অপরাহ্ণ | আপডেট: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ১০:৪১ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বিতর্কিত সুফি সাধক নুরুল হক মোল্লার (নুরাল পাগলা) দরবারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর ‘ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির’ ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা দরবারে হামলা চালায়। হামলায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন। হামলাকারীরা দরবারে ভাঙচুর চালিয়ে নুরুল হকের লাশ কবর থেকে তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়, যা এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি করে।

ঘটনার পটভূমি

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিজের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে একটি সুফি দরবার পরিচালনা করতেন নুরুল হক মোল্লা, যিনি স্থানীয়ভাবে ‘নুরাল পাগলা’ নামে পরিচিত। তিনি গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত্যুর পর, তার অনুসারীরা ‘বিশেষ কায়দায়’ একটি উঁচু কবর তৈরি করে সেটি দরবারের আঙ্গিনায় সংরক্ষণ করেন। এই বিষয়টি ঘিরে স্থানীয় আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তাদের দাবি ছিল, কবরটি ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী সমতল করতে হবে এবং দরবারে চলমান ‘অনৈতিক কর্মকাণ্ড’ বন্ধ করতে হবে।

বিক্ষোভের ঘোষণা ও সংঘর্ষের সূচনা

গত মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ‘ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি’ সংবাদ সম্মেলন করে নুরুল হকের দরবারে ‘ভ্রান্ত আকিদা, কুসংস্কার ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড’-এর অভিযোগ তোলে এবং বৃহস্পতিবারের মধ্যে কবর সমতল করার আল্টিমেটাম দেয়। দাবি না মানা হলে শুক্রবার ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’ নামে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশে অংশ নেওয়া শত শত মানুষ লাঠি, শাবল, হাতুড়ি নিয়ে দরবার অভিমুখে রওনা হন। পুলিশ, প্রশাসন ও স্থানীয় আলেমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও জনতা দেয়াল টপকে দরবারে প্রবেশ করে হামলা চালায়।

মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ

দরবারের অনুসারীরা ইটপাটকেল ছুঁড়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। উভয় পক্ষের মাঝে তীব্র ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে, এবং একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা দরবারের বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা ঘটে এরপর- নুরুল হকের কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে তা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে পদ্মার মোড়ে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অনেকেই একে দেশের ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধের ওপর ভয়াবহ আঘাত হিসেবে দেখছেন।

আইনের হস্তক্ষেপ

ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এর আগে বিক্ষোভকারীরা দুইটি পুলিশ ভ্যান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি ভাঙচুর করে।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. কৌশিক কুমার দাস জানান, আহতদের শরীরে ইট, লাঠি ও ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন রয়েছে। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

সরকারের বিবৃতি

অন্তর্বর্তী সরকার এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং একে ‘আমাদের সমাজের নৈতিক ভিত্তি ও মানবিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত’ বলে অভিহিত করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে-

‘এই ধরনের বর্বরতা কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। যারা এই ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

সরকার আরও জানায়, এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে এবং কারো প্রতিও পক্ষপাত দেখানো হবে না।