অন্তর্বর্তী সরকার ব্যয়সাশ্রয়ী নীতি উপেক্ষা করে আগামী নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জন্য নতুন গাড়ি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ৬০টি মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স (২৪২৭ সিসি) গাড়ি কেনার অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিটি গাড়ির দাম ধরা হয়েছে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, মোট ব্যয় হবে প্রায় ১০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
শুধু মন্ত্রীদের জন্য নয়, আগামী নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকদের জন্য কেনা হচ্ছে আরও ১৯৫টি পাজেরো এবং ২৫টি মাইক্রোবাস। সব মিলিয়ে ২৮০টি গাড়ি কিনতে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৪৪৫ কোটি টাকা।
এদিকে, চলতি অর্থবছরে নতুন গাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সরকার। তবুও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা নীতিগতভাবে বিতর্কিত। সরকারের পরিবহন পুলের হিসাবে দেখা যায়, গত সরকারের সময় কেনা ক্যামরি ও ল্যান্সার গাড়িগুলো এখনো ব্যবহারযোগ্য এবং ৯ বছরের পুরোনো। ফলে এবার কেনা গাড়িগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ সিদ্ধান্তকে অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেটের বাইরে উল্লেখ করে বলেন—
“পরবর্তী সরকারের জন্য গাড়ি কেনা তাদের দায়িত্ব নয়। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করা উচিত।”
১৯৭৩ সালের আইনে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের জন্য শুধু “কার” বরাদ্দ দেওয়ার বিধান রয়েছে। জিপগাড়ি ব্যবহারের জন্য আইন সংশোধনের প্রয়োজন। অথচ এবার সরাসরি ৬০টি পাজেরো জিপ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
২০১৫-১৬ সালে কেনা টয়োটা ক্যামরি হাইব্রিড (২৫০০ সিসি) প্রতিটির দাম ছিল ৮৫-৯০ লাখ টাকা।
প্রতিমন্ত্রীদের জন্য কেনা মিতসুবিশি ল্যান্সার (১৬০০ সিসি) প্রতিটির দাম ছিল ২০-২৫ লাখ টাকা।
এবার কেনা হচ্ছে পাজেরো কিউএক্স (২৪২৭ সিসি) প্রতিটির দাম ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে এত বিলাসবহুল গাড়ি কেনা কতটা যৌক্তিক?
অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করা হলো কি না?
আগামী মন্ত্রিসভার আকার ৬০ হবে—এই তথ্য তারা কীভাবে জানল?
সব মিলিয়ে গাড়ি কেনার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনা চলছে।