কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক আবারও খুলে মিলেছে বিপুল অঙ্কের দান। শনিবার (৩০ আগস্ট) সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানের নেতৃত্বে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সিন্দুক খোলার কাজ শুরু হয়। এ সময় মসজিদের নিচতলার ১৩টি লোহার সিন্দুক থেকে বের হয়েছে ৩২ বস্তা টাকা, বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বিদেশি মুদ্রা।
প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় চলছে টাকার গণনা। বস্তাভর্তি টাকা প্রথমে মেঝেতে ঢেলে দিয়ে পরে ইলেকট্রনিক গণনাযন্ত্রের মাধ্যমে বান্ডেল করা হচ্ছে। এ কাজে অংশ নিয়েছেন ৩৭০ জন — এর মধ্যে পাগলা মসজিদ নূরানী কুরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার ১০০ জন শিক্ষার্থী, আল জামিয়াতুল ইমদাদীয়ার ২০০ শিক্ষার্থী ও রূপালী ব্যাংকের ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
প্রতি তিন মাস অন্তর সিন্দুক খোলা হলেও এবার প্রায় সাড়ে চার মাস পর এ দান গণনার কাজ শুরু হলো। এর আগে গত ১২ এপ্রিল সিন্দুক খোলা হলে রেকর্ড ৯ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এবারও সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিশাল অঙ্কের দানকে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুরো মসজিদ এলাকা জুড়ে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। টাকা সংগ্রহ থেকে ব্যাংকে জমা পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন পুলিশের বিশেষ টিম।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার হাছান মাহমুদ বলেন, “টাকা গণনা থেকে শুরু করে ব্যাংকে পাঠানো পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিচ্ছে।”
এ দান থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে প্রায় ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, ইসলামি কমপ্লেক্সের নকশা অনুমোদন প্রায় শেষ পর্যায়ে, আগামী বছর থেকেই নির্মাণকাজ শুরু হবে। বর্তমানে পাগলা মসজিদের নামে ব্যাংকে জমা আছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা।
জনশ্রুতি আছে, কিশোরগঞ্জের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকায় নরসুন্দা নদীর এক চরে এক আধ্যাত্মিক সাধকের মৃত্যুর পর এখানে মসজিদ নির্মিত হয়। তার স্মৃতিকে ঘিরেই মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এখানে মানত করলে মানুষের আশা পূর্ণ হয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ-বিদেশের মানুষ বিপুল অঙ্কের দান করেন, যা সময়ের সাথে ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
প্রশাসনের ধারণা, এবারের দানও কয়েক কোটি টাকা ছাড়াবে। গণনা শেষে সঠিক অঙ্ক জানা যাবে।