টানা নয় সপ্তাহ মূলধন ও সূচকের উত্থান শেষে বিদায়ী সপ্তাহে বড় ধাক্কার মুখে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। ১০ থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার দিনই দরপতন দেখা গেছে। এর প্রভাবে কমেছে সূচক, লেনদেন এবং বাজার মূলধন। একই চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)।
ডিএসইর সাপ্তাহিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়া কোম্পানির তুলনায় তিন গুণ বেশি কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। এ সময়ে মাত্র ৯৯ কোম্পানির দাম বেড়েছে, ২৭৪টির দাম কমেছে এবং অপরিবর্তিত থেকেছে ২৩টি।
মূলধনে ধস
সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা কম। এর ফলে বাজার মূলধনে ০.৪৭ শতাংশ পতন হয়েছে। ঈদুল আজহার আগের সপ্তাহ থেকে টানা ৯ সপ্তাহে যে ৬৮ হাজার ৯৫ কোটি টাকা মূলধন বেড়েছিল, সেই ধারার ইতি ঘটল এ সপ্তাহে।
সূচকে বড় পতন
প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সপ্তাহজুড়ে কমেছে ৫৭.৯২ পয়েন্ট বা ১.০৭ শতাংশ। পাশাপাশি ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ২৩.৮৮ পয়েন্ট (১.১৪%) এবং শরিয়াহ সূচক কমেছে ৭.২৬ পয়েন্ট (০.৬২%)। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা কোম্পানির সূচক ডিএসএমইএক্স উল্টো বেড়েছে ৩০.৮০ পয়েন্ট বা ৩.২৯ শতাংশ।
লেনদেনে ধীরগতি
বিদায়ী সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৬৮৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের গড় ৯১১ কোটি টাকার তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ কম। ওরিয়ন ইনফিউশন সর্বোচ্চ লেনদেনের তালিকায় শীর্ষে ছিল, এরপর বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও সিটি ব্যাংক রয়েছে।
বৈচিত্র্যের উত্থান, বড় খাতের অনুপস্থিতি
ডিএসইর শীর্ষ ২০ দাম বৃদ্ধির তালিকায় ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা ও জ্বালানি খাত অনুপস্থিত ছিল। বরং সিরামিক, বস্ত্র, খাদ্য, ওষুধ, চামড়া ও প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলো তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
বিশ্লেষকদের অভিমত
তাদের মতে, বড় খাতের কোম্পানিগুলোতে অনিশ্চয়তা ও আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহ করছে। বিপরীতে, কমদামী ও অবমূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়ছে, যা ঝুঁকির সম্ভাবনা তৈরি করছে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চিত্র
সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২২০ পয়েন্ট বা ১.৪৪ শতাংশ। সেখানে বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ১৬০ কোটি টাকা।
আগামী সপ্তাহের সম্ভাবনা
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের দামের অবস্থান এখন বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। তবে জ্বালানি খাতের নীতি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত বাজারের অনিশ্চয়তা কাটবে না। অন্যদিকে বস্ত্র খাতে রপ্তানি অর্ডার বাড়ায় ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যেতে পারে।