ঢাকা, ২৯ জুলাই — “আমাদের পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে, এখন যদি কেউ কিছু না করে, তাহলে হয়তো বাঁচার আশা থাকবে না”—এই করুণ আকুতি জানালেন কুমিল্লার মুরাদনগরের বাসিন্দা রুমা আক্তার। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তিনি তার মা, ভাই ও বোনকে একসঙ্গে খুন হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি জানান, গত ৩ জুলাই তার গ্রামের বাড়িতে এক পরিকল্পিত হামলায় তার মা, ভাই ও বোনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় এবং তাকেও নির্মমভাবে কুপিয়ে ফেলা হয়। অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তিনি। কিন্তু মামলায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়নি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনকে, যিনি এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী বলে দাবি করেন রুমা।
রুমার অভিযোগ, ঘটনার একদিন আগে স্থানীয় এক কিশোরের মোবাইল চুরিকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা তৈরি হয়, তা থেকেই শুরু হয় হত্যার চক্রান্ত। তার মা সামাজিকভাবে জনপ্রিয় হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ঈর্ষান্বিত ছিল একটি প্রভাবশালী মহল। এই জনপ্রিয়তাই তাদের হত্যার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি জানান, গ্রামের গোপন বৈঠকে তার মাকে ‘চোরের পক্ষ’ নেওয়ার অজুহাতে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থ লেনদেন ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়োগ করা হয়। হত্যাকাণ্ডের দিন ভোরবেলা পরিকল্পিতভাবেই সশস্ত্র হামলা চালানো হয় তাদের বাড়িতে।
এই ঘটনায় মাথায় ৭২টি সেলাইসহ রুমা এখনো সেরে ওঠেননি, তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তার দাবি, পুলিশের উপস্থিতিতেই হামলাকারীরা হত্যা নিশ্চিত করে।
রুমা বলেন, মামলায় পুলিশের পক্ষ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রধান অভিযুক্তদের বাদ দেওয়া হয়েছে। শিমুল চেয়ারম্যান, বাচ্চু মেম্বারসহ বহু সন্ত্রাসী এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার মদদে মূল অভিযুক্তরা লুকিয়ে রয়েছে বলেও অভিযোগ তার।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন—
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে।
মামলাটি পুনর্বিন্যাস করে প্রকৃত অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এবং তাদের পরিবারের সকল সদস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
শেষে রুমা বলেন, “আজ আমরা মায়ের মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে এসেছি, আগামীকাল যেন নিজেরা না যাই—এই দুঃখ নিয়েই বাঁচার আশা করছি। আমাদের একটু বাঁচতে দিন। আমরা সত্যিই বাঁচতে চাই।”