গত ১৫ বছরে যশোরের ভারত-সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলায় ৭৯ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৪ জন ধর্ষণের পর নির্মমভাবে খুন হন। ভয়াবহ এই ঘটনাগুলোর অধিকাংশেই বিচার হয়নি—অভিযোগ ভুক্তভোগীদের পরিবারের। পুলিশের দুর্বল তদন্ত, সাক্ষীর অভাব এবং প্রভাবশালীদের চাপের কারণেই একে একে সব আসামি জামিনে মুক্তি পেয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শার্শা থানায় ৪৮টি ও বেনাপোল পোর্ট থানায় ৩১টি ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়। অধিকাংশ মামলাতেই আসামিরা জামিন পেয়ে গেছেন বা প্রভাব খাটিয়ে মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে বাদী পক্ষকে।
২০১০ সালে বেনাপোলের গয়ড়া গ্রামে কাজল রেখা নামের এক তরুণীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, সম্পত্তি বিরোধের জেরে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতাসহ কয়েকজন তাকে হত্যা করে। মামলা দায়েরের পর পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করা হয়। আজও ন্যায়বিচারের মুখ দেখেননি কাজলের পরিবার।
২০১৪ সালে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সেলিনা খাতুনকে গণধর্ষণ করে হত্যার পর লাশ খালে ফেলে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে শিশু শাহপরানকে বলৎকার করে হত্যা করা হয় একটি মাদ্রাসায়। এমনকি ২০১৪ সালে মাদ্রাসা ছাত্রী আর্জিনা খাতুনকেও ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার হলেও পরে অধিকাংশই জামিনে ছাড়া পায়।
মানবাধিকার সংগঠন “রাইটস যশোর”-এর নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “বিচারহীনতার কারণে ধর্ষণ ও হত্যার মতো অপরাধ দিন দিন বেড়ে চলেছে। প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ পরিবারগুলো।”
শার্শা উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবুল হাসান জহির বলেন, “আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপি পরিবারসহ অনেক সাধারণ মানুষ বিচারহীনতার শিকার হয়েছেন। তাদের পাশে থাকবে বিএনপি।”
এদিকে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, “ভুক্তভোগী পরিবার চাইলে যেকোনো সময় আইনি সহায়তা নিতে পারেন। আমরা আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছি।”
ভুক্তভোগীদের দাবি—দূর্বল তদন্ত, রাজনৈতিক প্রভাব এবং বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি বন্ধ না হলে, শিশু ও নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করবে।