একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ের ভিত্তিতে গঠিত ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে রাজপথে নেমেছিলেন মাকছুদুর রহমান জুনায়েদ। কাওমি অঙ্গনের এই তরুণ নেতা বরাবরই মানুষের অধিকার রক্ষায় আপসহীন। তিনি কখনোই মাথানত করে অন্যায়ের সাথে বাঁচার জন্য জন্ম নেননি—এই বিশ্বাস থেকেই আন্দোলনের ময়দানে নিজের জায়গা করে নেন।
জুলাইয়ের উত্তাল আন্দোলনে তিনি শুধু রাজপথে থাকেননি, বরং নিজের ভবিষ্যৎ ও পড়াশোনাকেও গুরুত্ব দিয়েছেন সমানভাবে। বর্তমানে জামিয়াতুল আনোয়ার, যাত্রাবাড়ীতে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পড়ছেন তিনি। তবে চোখে তাঁর সেই আগুন, যে আগুন তাকে সাহসী করে তুলেছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে।
তার ভাষায়, “আজও ভাবি, কীভাবে এই অন্যায়, অবিচার, চাঁদাবাজি আর শোষণের বিরুদ্ধে সংগঠিতভাবে দাঁড়ানো যায়। দেশ ও মানুষের স্বার্থে যে কোনো সময় ডাক এলে আবারও ঝাঁপিয়ে পড়ব।”
তিনি ছিলেন সেই জুলাইয়ের যাত্রাবাড়ি রণাঙ্গনের অন্যতম সৈনিক। ইট-পাটকেলের আঘাতে পড়ে যাওয়া, আবার উঠে দাঁড়িয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্পটি আজ বহু তরুণের অনুপ্রেরণা। পুলিশের টিয়ারশেল উপেক্ষা করে রাজপথে থাকার সাহসিকতাই জানান দেয়, মাকছুদের মতো সৈনিকেরা সহজে থামে না।
জুলাইয়ের আন্দোলনের শুরুতে অনলাইনেই বেশ সক্রিয় ছিলেন মাকছুদ। ১১ জুলাই শাহবাগে অবস্থান নিয়ে শুরু করেন রাজপথের আন্দোলন। নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, “কোটা কী বুঝি না, আমরা চাই মেধার মূল্যায়ন। অন্যথায় মানচিত্র থেকে স্বৈরাচার বিলুপ্ত হবে, ইনশাআল্লাহ।”
এই স্ট্যাটাসের পর থেকেই হুমকি-ধামকি আসতে থাকে, তবে তাতে দমে যাননি। পরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আন্দোলনকে আরও বেগবান করার পরিকল্পনা করেন। নিজের মাদরাসার বন্ধুদের ডেকে আনেন যাত্রাবাড়ি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে।
পরবর্তীতে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নয়, একটি সংগঠিত প্ল্যাটফর্ম থেকেই আন্দোলন চালাতে হবে। তখন তৈরি হয় “বৈষম্যবিরোধী কওমি ছাত্র আন্দোলন” নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ। এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন মাদরাসা শিক্ষার্থীদের একত্রিত করে ২ আগস্ট যাত্রাবাড়িতে প্রথম প্রকাশ্য বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
৪ আগস্ট পেজ ইভেন্টের মাধ্যমে সারাদেশে মাদরাসাগুলোর সামনে বিক্ষোভ আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়, যা ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
সরকারের দমন-পীড়নের মুখেও আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল জালিমের পতন এবং একটি নতুন, শোষণমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ। মাকছুদের মতে, কারও ব্যক্তিগত উৎসাহে নয়, বরং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি রাজপথে নেমেছেন।
তিনি বলেন, “আমার ভেতর থেকে একটা অদ্ভুত তাড়না কাজ করছিল, যে আর চুপ থাকা চলে না। মাথা নিচু করে বেঁচে থাকার জন্য আমরা জন্মাইনি।”