কারসাজিতে এই কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। কৃষকরা বলছেন, সরকারি মূল্যে সার না পেয়ে তারা অতিরিক্ত দামে খুচরা দোকান থেকে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন, এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক চাষিরা।

সরকার এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় ডিলারশিপ বাতিলের পাশাপাশি একটি আধুনিক নীতিমালার খসড়াও তৈরি করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পরও এখনও পুরোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ডিলাররাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ডিলার পালিয়ে থাকলেও তাদের নামে এখনও সার বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

মাঠে সংকট, দোকানে মজুত
চুয়াডাঙ্গা, গাইবান্ধা, রাজশাহী, মাগুরা, নীলফামারীসহ বিভিন্ন জেলায় কৃষকরা অভিযোগ করছেন, সরকারি ডিলার পয়েন্টে সারের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। অথচ খুচরা দোকানগুলোতে ঠিকই বেশি দামে সার পাওয়া যাচ্ছে। চাষিরা বলছেন, ৩০ কেজির পরিবর্তে তাদেরকে মাত্র ১০ কেজি সার দেওয়া হচ্ছে, যা জমির চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়।

অনিয়ম ও জরিমানা
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, মাগুরার গাংনালিয়া বাজারে বেশি দামে সার বিক্রি ও মজুত রাখার অভিযোগে বিভিন্ন ডিলারের বিরুদ্ধে প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে। মাগুরার একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ডিলারশিপ
সারা দেশে বিসিআইসি ও বিএডিসির অধীনে প্রায় সাত হাজারের বেশি ডিলার রয়েছেন, যাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পেয়েছেন। এমনকি একই পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে ডিলারশিপ থাকার অভিযোগও আছে। অনেক ইউনিয়নে স্থানীয় বাসিন্দা না হয়েও ডিলাররা ব্যবসা চালাচ্ছেন উপজেলা শহর থেকে, এতে কৃষকদের পরিবহন খরচ বাড়ছে।

নীতিমালা বদলের পথে সরকার
সারের সংকট ও ডিলার নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকার নতুন করে একটি সমন্বিত নীতিমালা— “সার ডিলার নিয়োগ ও বিতরণ নীতিমালা ২০২৫” প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। এর আওতায় সব ডিলারের তথ্য হালনাগাদ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একক সংস্থার অধীনে ডিলারশিপ প্রদান, ডিজিটাল ট্র্যাকিং ব্যবস্থা চালু এবং প্রতিটি লেনদেনে স্বচ্ছতা আনলে সার নিয়ে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব।

কৃষি উপদেষ্টার বার্তা
কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এখন থেকে রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে নয়, বরং যোগ্যতার ভিত্তিতে ডিলারশিপ দেওয়া হবে। যারা আগে অনিয়ম করেছে, তারা বাদ পড়বে। চলতি মৌসুমে সার সংকট হবে না বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।