Print

Rupantor Protidin

মোল্লাহাটে পান চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে,পরিবর্তন হচ্ছে কৃষকের ভাগ্য

প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২৮, ২০২৫ , ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: জুলাই ২৮, ২০২৫, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

Sheikh Kiron

বাগেরহাটের মোল্লাহাটে পান চাষ বেড়েছে। এতে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে।মোল্লাহাটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় সে চিত্র।মোল্লাহাটের গিরিশ নগর,চুনখোলা,আটজুড়ী,ভৈরবনগর, নগরকান্দী,গাংনী, ভান্ডারখোলা সহ  বেশ কিছু এলাকায় পান চাষ হয়।পান চাষ লাভজনক হওয়ায় বেড়ে চলেছে এর চাষাবাদ। কিন্তু বর্তমানে দাম কমে থাকায় পান চাষিগণ অসুবিধায় পড়েছেন।জানা যায়,শীতকালে পানের দাম বৃদ্ধি পেলে এ ক্ষতি পূরণ করা যাবে।
পান বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। এটি কেবল মুখশুদ্ধি হিসেবেই নয়, এর রয়েছে নানা ঔষধি গুণাগুণও।
পান চাষ পদ্ধতি
পান চাষের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়:
  •  জমি নির্বাচন ও তৈরি: পান চাষের জন্য উঁচু, বন্যামুক্ত, বেলে দোআঁশ বা এটেল দোআঁশযুক্ত জমি ভালো। ছায়াযুক্ত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া পান চাষের জন্য উপযুক্ত। জমিকে আগাছামুক্ত ও সমতল করে তৈরি করতে হয়। প্রতিটি ৬০ সে.মি. পর পর ২০ সে.মি. চওড়া করে নালা তৈরি করতে হয়। জমি তৈরির সময় প্রতি একরে ২০০ কেজি তিলের খৈল বা নিম তৈল, ৪০ কেজি টিএসপি এবং ৬০ কেজি এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। মাটিকে রোগমুক্ত করার জন্য ফরমালিন বা বোঁর্দো মিশ্রণ ব্যবহার করা যায়।
  • বরোজ তৈরি: পান গাছকে পর্যাপ্ত ছায়া ও প্রবল বাতাস থেকে রক্ষা করার জন্য বরোজ তৈরি করা অপরিহার্য। বরোজ তৈরিতে বাঁশ, বাঁশের চটা, ছন বা কাশ জাতীয় ঘাস, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। বাঁশের খুঁটি আলকাতরার প্রলেপ দিয়ে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয় যাতে উইপোকা আক্রমণ করতে না পারে। এরপর বাঁশের চটা, ছন/খড় দিয়ে ছাউনি এবং শুকনো কলাপাতা, খেজুর পাতা, সুপারি পাতা দিয়ে বেড়া তৈরি করা হয়।
  •  চারা রোপণ: বরোজের ভেতরে চারপাশে ৬০ সে.মি. চওড়া রাস্তা রেখে বেড তৈরি করতে হয়। প্রতিটি বেড ১২০ সে.মি. চওড়া হবে এবং তাতে দুটি লাইনে চারা রোপণ করতে হবে। একটি লাইন থেকে আরেকটি লাইনের দূরত্ব ৩০ সে.মি. রাখা উচিত। সাধারণত বর্ষাকাল বা আষাঢ় মাস চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। কাটিং (লতার অংশ) সামান্য কাত করে (৪৫ ডিগ্রি) অর্ধেক অংশ মাটির ভেতরে এবং বাকি অংশ চোখ বা মুকুল মাটির উপরে রেখে রোপণ করা হয়। প্রতি শতকে ৪০০-৫০০টি কাটিং প্রয়োজন হতে পারে।
  •  পরিচর্যা: রোপণের পর বাড়তি চারা তুলে পাতলা করে দিতে হয়। লতা বড় হয়ে বরোজের ছাউনিতে ঠেকলে নিচের দিকের পাতা তুলে লতাটি নামিয়ে দিতে হয়, এতে পাতার আকার স্বাভাবিক থাকে ও ফলন বাড়ে। বছরে ৩-৪ বার গোড়ার মাটি তুলে দেওয়া প্রয়োজন।
  •  সার প্রয়োগ: জৈব সারের পাশাপাশি সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। প্রতি শতক জমির জন্য খৈল ২০ কেজি, ২.৫ কেজি এসএসপি, ৬০০ গ্রাম এমওপি এবং ১.৮ কেজি ইউরিয়া সার সমান চার ভাগে ভাগ করে বছরে প্রয়োগ করা যায়।
  •  সেচ ও নিষ্কাশন: পানের জন্য নিয়মিত সেচ প্রয়োজন হয়, তবে জমিতে পানি জমে থাকা উচিত নয়। দ্রুত অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  •  ফসল সংগ্রহ: রোপণের ২-৩ মাস পর থেকে পান সংগ্রহ শুরু করা যায়। এরপর সাধারণত ১৫-২৫ দিন পর পর পাতা সংগ্রহ করা হয়।
পানের জাত
বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের পান চাষ হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু জাত হলো:
 * বাংলা পান: এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতগুলির মধ্যে একটি। এটিকে “মিঠা পান” বা “ঝাল পান” (রাজশাহীর পান) নামেও ডাকা হয়।
 * মিঠা পান: এটি সাধারণত চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশি চাষ হয়।
 * সাচি পান: মহেশখালীতে এই জাতের পান বেশি দেখা যায়।
 * কর্পূরী পান* গ্যাচ পান, নাতিয়াবাসুত পান,* উজানী পান,*মাঘি পান,* দেশী পান, বরিশাল ওঝালি পান
 * খাসিয়া পান: সিলেটের খাসিয়া পাহাড়ে এই পান চাষ হয়।
পান পাতার ব্যবহার ও উপকারিতা
পান পাতার অনেক ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে এবং এটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়:
 * হজমে সহায়তা: পান লালাগ্রন্থির নিঃসরণ বাড়ায় যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সাহায্য করে।
 * মুখের স্বাস্থ্য: পান পাতায় থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগ মুখের দুর্গন্ধ দূর করে এবং দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
 * ঠান্ডা-কাশি ও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা: পান পাতার রস ঠান্ডা, কাশি, হাঁপানি এবং ব্রঙ্কাইটিসের উপশমে কার্যকর।
 * ক্ষত নিরাময়: পান পাতায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিসেপটিক গুণাগুণ থাকায় এটি ছোটখাটো ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
 * ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: গবেষণায় দেখা গেছে, পান পাতা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
 * ব্যথানাশক: পান পাতার বেদনানাশক গুণ রয়েছে, যা ব্যথা কমাতে সহায়ক। মাথা ব্যথা হলে কপালে পান পাতা রাখলে উপকার পাওয়া যায়।
 * অ্যান্টি-ফাংগাল: পান পাতার রস ফাংগাল সংক্রমণ রোধে কার্যকর।
 * খিদে বাড়ায়: পান পাতা পেটের পিএইচ লেভেল ঠিক রাখে এবং ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে।
 * বিষণ্নতা কমানো: পান বিষণ্নতার লক্ষণ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
 * অন্যান্য: এটি শরীরের পিএইচ ভারসাম্য রক্ষা করে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং এতে ভিটামিন সি, থিয়ামিন, নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন ও ক্যারোটিনের মতো উপকারী উপাদান থাকে।
সতর্কতা: পান খাওয়ার সময় অতিরিক্ত চুন ও সুপারি ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এগুলি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
পান চাষ একটি লাভজনক কৃষি কাজ হতে পারে, তবে এর জন্য সঠিক জ্ঞান ও পরিচর্যা প্রয়োজন।