ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ঘটনায় এখনও হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন ৫৭ জন আহত, যাদের মধ্যে ৪১ জনই শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীর ৩৮ জনের বয়স ১৫ বছরের নিচে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৯ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮ জন শিক্ষার্থীর পরিচয় ও বয়স শনাক্ত করা গেছে, যাদের সবার বয়স ১৫ বছরের নিচে। ভয়াবহ এই ঘটনায় ১০ বছরের নিচে মৃত্যুবরণ করেছে ৯ শিশু, এবং আহতদের মাঝেও ১২ বছরের নিচে রয়েছে ৩৬ জন, যাদের ২১ জনের বয়স ১০ বছরেরও কম।
ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই যে, ৭টি মরদেহ এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষার্থী বলে ধারণা করা হচ্ছে। মরদেহগুলোর অবস্থা এতটাই খারাপ যে, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেই পরিচয় নিশ্চিত করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু করে। আইএসপিআর জানায়, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো তথ্য গোপন করার চেষ্টা নেই এবং বিভ্রান্তি দূর করতে জনগণের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৪ জন। তাদের মধ্যে আইসিইউতে থাকা আটজন হলেন – মাহতাব (১৪), মাসুমা (৩২), মাহিয়া (১৫), আয়ান (১৪), জারিফ (১২), নাভিদ নেওয়াজ (১২), সায়মন (১৮) এবং শিক্ষক মাহফুজা খাতুন (৪৫)।
পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে রয়েছেন – তাসনুবা (১১), তাসনিয়া (১০), শ্রেয়া (৯), রাইসা (১১), পায়েল (১২), ইউসা (১১), রুপি বড়ুয়া (১০), কাফি আহমেদ (১০) সহ মোট ২১ জন।
সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ২১ জনের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক আনোয়ার (৩৪), অধ্যক্ষের সহকারী আতিক (২১), ছাত্র আকিব (১২) এবং অন্যান্য আহত ব্যক্তি।
এছাড়া কুয়েত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হিউম্যান এইড হাসপাতালেও আহতরা চিকিৎসাধীন আছেন। হিউম্যান এইডে তাকরিম হক (১৬) আইসিইউতে রয়েছেন।
মাইলস্টোন স্কুলের অধ্যক্ষ জিয়াউল আলম জানান, একটি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, “আমরা খুব নিষ্ঠার সঙ্গে পুরো ঘটনাটি বিশ্লেষণ করবো। অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এখনও নিখোঁজদের খুঁজছেন। আমরা তাদের পাশে আছি।”
তিনি আরও বলেন, “অনেক শিক্ষার্থী ট্রমায় ভুগছে। সহপাঠীর মৃত্যুদৃশ্য চোখের সামনে দেখেছে। কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ফোনে সাহস দিচ্ছেন।”
পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষাই এখন প্রধান ভরসা। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, দগ্ধ দেহে আঙুলের ছাপ মেলে না, এমনকি চেহারাও বিকৃত হয়ে যায়। একমাত্র দাঁতের পাল্প টিস্যু থেকেই ডিএনএ সংগ্রহ করে শনাক্তকরণ সম্ভব।