রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে আঘাত হানার পর ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীদের মা, বাবা ও স্বজনেরা ভিড় করেছেন। তাঁরা তাঁদের সন্তানদের খোঁজছেন, কেউ কেউ এখনো প্রিয়জনের কোনো সন্ধান পাননি। এই মর্মান্তিক ঘটনায় এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস, এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন, যদিও নির্দিষ্ট সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আজ সোমবার (২১ জুলাই, ২০২৫) বেলা দেড়টার কিছু আগে মাইলস্টোন স্কুলের দোতলা ভবনের প্রবেশমুখে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গেই বিকট শব্দে আগুন ধরে যায়, যা চারিদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।
বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ২৮ জনকে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বেশ কয়েকজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এ পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাস্থলে পুরোদমে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে এবং পুলিশও সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
ঘটনাস্থলে থাকা লাকি আক্তার নামের এক অভিভাবক বেলা তিনটার দিকে জানান, তাঁর দুই সন্তান মাইলস্টোন স্কুলে পড়ে। তিনি বলেন, “বড় সন্তানকে বের করতে পেরেছি। ছোটটাকে খুঁজে পাচ্ছি না।” ফেরদৌসী বেগম নামের আরেক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে ভেতরে আটকা পড়েছে এবং তিনি তার মেয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছেন না।
মাইলস্টোন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পরিচয় দেওয়া মো. সবুজ মিয়া জানান, দোতলা ভবনটিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হতো। ক্লাস শেষ হয়েছিল বেলা ১টার দিকে। কিছু শিক্ষার্থী বেরিয়ে গিয়েছিল, তবে অনেকে অভিভাবকদের জন্য অপেক্ষা করছিল। ঠিক তখনই বিমানটি বিধ্বস্ত হয় এবং আগুন ধরে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিম হাসান সিয়াম জানান, প্রজেক্ট-২ ভবনের সামনে বিমানটি পড়েছে। ওই ভবনে দুটি তলা মিলিয়ে মোট ১৬টি ক্লাসরুম এবং ৪টি শিক্ষকদের রুম আছে। প্রাথমিকের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হতো এই ভবনে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শ্রেণিকক্ষের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। সিয়াম আরও বলেন, ক্লাস চলছিল এবং আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লাস শেষ হতো। ঠিক সেই সময় কলেজের প্রজেক্ট-৭ নম্বর ভবনে বিমানটি ধাক্কা লেগে জ্বালানি লিকেজ হয়। পরে প্রজেক্ট-২ ভবনের সামনে এসে সেটি আছড়ে পড়ে।
এই ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এবং উদ্ধার অভিযান এখনও চলমান রয়েছে।