Print

Rupantor Protidin

শিক্ষার্থী মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে উত্তাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৯, ২০২৫ , ৪:৫৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: জুলাই ১৯, ২০২৫, ৪:৫৬ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে উত্তাল ক্যাম্পাস, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হলের সামনের পুকুরে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সাজিদ আব্দুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। আজ শনিবার (১৯ জুলাই, ২০২৫) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে হাজারো শিক্ষার্থী সমবেত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। শিক্ষার্থীরা সাজিদের মৃত্যুকে অস্বাভাবিক ও রহস্যজনক দাবি করে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ‘ভূয়া ভূয়া’ স্লোগান দেন। তারা এই মৃত্যুর পেছনে প্রশাসনের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন।

শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও অভিযোগ: শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তারা লাশ দেখে প্রশাসনকে জানানোর প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর সেই লাশ উদ্ধার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে থানা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ আসতে এত সময় লেগেছে কেন, তা নিয়েও তারা প্রশ্ন তোলেন। এছাড়া, লাশ উঠানোর প্রায় আধা ঘণ্টা পার হলেও সেখানে কোনো ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স আসেনি। তারা আরও অভিযোগ করেন, লাশ শনাক্তের দুই ঘণ্টার মধ্যেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা কিংবা হল প্রভোস্টের দেখা মেলেনি।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা সচল নেই। এজন্য সাজিদ কখন কোথায় গিয়েছে, তা তারা দেখতে পাচ্ছেন না। প্রশাসনকে বারবার বলার পরেও তারা বাজেট ঘাটতির কথা বলে সিসি ক্যামেরা লাগাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, “তাদের যদি এতই ঘাটতি থাকে তাহলে আমাদের বলুক আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে ক্যামেরা লাগাবো।”

শিক্ষার্থীদের দাবি ও কর্মসূচি: বিক্ষোভ থেকে শিক্ষার্থীরা সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ, পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা, আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট শতভাগ মনিটরিংয়ের আওতায় আনা, ক্যাম্পাসের চারপাশে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা, ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত রোড লাইট স্থাপন ও সক্রিয় রাখা, ও বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে অংশ নিয়েছে।

পূর্ববর্তী কর্মসূচি ও প্রশাসনের পদক্ষেপ: এর আগে আজ সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে সাজিদ আব্দুল্লাহর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হয়। এদিকে, শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন না করা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল শুক্রবার রাতে সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে শাখা ছাত্রশিবির একটি টর্চলাইট মিছিল করে। এসময় তারা নিরাপদ ক্যাম্পাস, শতভাগ আবাসিকতা, ও পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় আনার জোর দাবি জানান। পরে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাজিদের মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করে শাখা ছাত্রদল।

এদিকে, এই ঘটনার তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শহীদ জিয়াউর রহমান হল কর্তৃপক্ষ আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

উপ-উপাচার্যের বক্তব্য: এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী বলেন, “ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসনের পৃথক তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কিভাবে তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গেই আছি। তাদের জন্য কাজ করছি।”

উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকেল পাঁচটার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং শহিদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং রুমে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়।